ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতি দিনে দিনে দ্রুত গতিতে প্রসারিত হচ্ছে। নগদ টাকার ব্যবহার কমিয়ে সাধারণ মানুষ এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই ছোট থেকে বড় সব লেনদেন করে ফেলছেন। এর পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস বা ইউপিআই (UPI)। আর সেই ইউপিআই ব্যবস্থাতেই আসছে নতুন নিয়ম, যা কার্যকর হবে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে। এই নিয়ম পরিবর্তনের ফলে লাখ লাখ গ্রাহক ও ব্যবসায়ী নতুন অভিজ্ঞতা পেতে চলেছেন।
এনপিসিআই-এর নির্দেশিকা: নতুন নিয়ম কাদের জন্য কার্যকর?
ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (NPCI) জানিয়েছে, তাদের সদস্য ব্যাংক, পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (PSP), এবং জনপ্রিয় পেমেন্ট অ্যাপগুলিকে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে এই নতুন নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ ফোনপে, গুগল পে, পেটিএম বা অন্য যেকোনও ইউপিআই অ্যাপ ব্যবহারকারী সরাসরি এই নিয়মের প্রভাব অনুভব করবেন।
২০২৪ সালের ২৪ আগস্ট এনপিসিআই প্রথমবার কর সংক্রান্ত কিছু নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির জন্য প্রতি লেনদেনে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সীমা বাড়িয়েছিল। এবার সেই নিয়ম আরও বিস্তৃত করা হচ্ছে।
কেন ইউপিআই লেনদেনের সীমা বাড়ানো হলো?
ইউপিআই এখন ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় ডিজিটাল লেনদেন মাধ্যম। প্রতিদিন কোটি কোটি লেনদেন এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। শুরুতে ইউপিআইকে ছোটখাটো দৈনন্দিন খরচ মেটানোর জন্য বানানো হলেও বর্তমানে—
- ব্যবসায়িক লেনদেন
- কর পরিশোধ
- শিক্ষা ফি জমা
- হাসপাতালের বিল
- বড় কেনাকাটা
সব ক্ষেত্রেই মানুষ এটি ব্যবহার করছেন। বাজারে এই চাহিদা অনেকদিন ধরেই ছিল যে ইউপিআই লেনদেনের সীমা আরও বাড়ানো হোক। এনপিসিআই সেই দাবি পূরণ করল।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী কী পরিবর্তন আসছে?
নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে—
- প্রতি লেনদেনে সীমা বৃদ্ধি: নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির জন্য ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লেনদেনের অনুমতি থাকবে।
- ভেরিফাইড মার্চেন্ট সুবিধা: এই বাড়তি সীমা শুধুমাত্র তাঁদের জন্য প্রযোজ্য হবে যারা NPCI-স্বীকৃত ভেরিফাইড মার্চেন্ট হিসেবে তালিকাভুক্ত।
- ব্যাংকের ভূমিকা: সদস্য ব্যাংকগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে এই সুবিধা শুধুমাত্র নিয়ম মেনে চলা ব্যবসায়ীরা পান।
- অভ্যন্তরীণ সীমা নির্ধারণ: প্রতিটি ব্যাংক চাইলে তাদের নীতির ভিত্তিতে আলাদা সীমা নির্ধারণ করতে পারবে, তবে এনপিসিআইয়ের নির্ধারিত সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করতে পারবে না।
গ্রাহকদের জন্য কী সুবিধা হবে?
এই নতুন নিয়মে সাধারণ গ্রাহকরা একদিকে যেমন উপকৃত হবেন, অন্যদিকে কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি হতে পারে।
- উচ্চমূল্যের পেমেন্ট যেমন হাসপাতালের খরচ, টিউশন ফি বা কর পরিশোধে এখন আর ব্যাংক ট্রান্সফারের ঝামেলা নিতে হবে না।
- সবকিছু হবে রিয়েল টাইমে এবং সহজে।
- ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা আরও বাড়বে।
তবে অনেকে বলছেন, সীমা বৃদ্ধি করার ফলে প্রতারণার ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। তাই প্রতিটি লেনদেনে নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি।
ব্যবসায়ীদের উপর প্রভাব
নতুন নিয়ম সবচেয়ে বেশি উপকার করবে বড় ব্যবসায়ী ও সংস্থাগুলিকে। এখন তাঁরা একবারেই উচ্চমূল্যের লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবেন।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি কিংবা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে।
- ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে, কারণ তাঁদের গ্রাহকরা নিশ্চিন্তে বড় অঙ্কের পেমেন্ট করতে পারবেন।
- ভেরিফাইড মার্চেন্ট ট্যাগ পাওয়ার প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে, যাতে গ্রাহকের আস্থা অর্জন করা যায়।
ব্যাংক ও অ্যাপগুলির ভূমিকা
এই নতুন নিয়ম বাস্তবায়নের জন্য সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পড়বে ব্যাংক এবং ইউপিআই অ্যাপগুলির উপর।
- প্রতিটি লেনদেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।
- গ্রাহকদের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া আরও শক্তিশালী করতে হবে।
- বড় অঙ্কের লেনদেনের সময় গ্রাহককে নোটিফিকেশন, ওটিপি কিংবা ডাবল অথেনটিকেশন বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।
ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের ভবিষ্যৎ
ভারত আজ বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ডিজিটাল অর্থনীতি। শুধুমাত্র জুলাই ২০২৫ মাসেই প্রায় ১২০০ কোটি ইউপিআই লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। নতুন নিয়ম চালু হওয়ার পর এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন—
- ২০২৭ সালের মধ্যে ইউপিআই ভারতের মোট খুচরা লেনদেনের ৭০% কভার করবে।
- বিদেশে ভারতীয় প্রবাসীরাও ধীরে ধীরে এই ব্যবস্থার সুবিধা পেতে শুরু করবেন।
- ডিজিটাল পেমেন্টের সাথে জুড়ে যাবে আরও নতুন প্রযুক্তি যেমন এআই-ভিত্তিক ফ্রড ডিটেকশন, ব্লকচেইন ইন্টিগ্রেশন ইত্যাদি।
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে কার্যকর হতে চলা এই নতুন ইউপিআই নিয়ম ভারতীয় অর্থনীতিতে এক বড় পরিবর্তন আনবে। এখন থেকে গ্রাহকরা আরও সহজে ও দ্রুত বড় অঙ্কের টাকা ট্রান্সফার করতে পারবেন। ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন, ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব বাড়বে, আর সামগ্রিকভাবে ভারতের ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা। সীমা যতই বাড়ুক না কেন, গ্রাহকের তথ্য ও অর্থ যাতে কোনওভাবেই ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে, তা নিশ্চিত করাই হবে আসল চ্যালেঞ্জ।

My name is Bongo Sambad, and I have been involved in content writing for the past four years. I provide various types of informative content for users.