পশ্চিমবঙ্গ সরকার ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে মহিলা সকলের জন্যই বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে এসেছেন যার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণী ছাত্রছাত্রীরা। এবার পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়ে এসেছেন তরুণের স্বপ্ন প্রকল্প যেখানে প্রত্যেকটি ছাত্রছাত্রীদের 10 হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের যেকোনো স্কুলে পড়াশোনা করলে এই টাকা পাওয়া যাবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য এবং ডিজিটাল উন্নয়নমুখী করার জন্য অন্যতম বৃহৎ ও জনপ্রিয় সামাজিক প্রকল্প “তরুণের স্বপ্ন” (Taruner Swapna Scheme) আবারও শুরু হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও এই তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের ১০,০০০ টাকা করে অনুদান দেওয়া হচ্ছে, এই টাকা সরকার দিচ্ছে বিশেষ করে মোবাইল বা ট্যাব কেনার জন্য। তবে তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের টাকা পেতে গেলে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম ও সর্তকতা মানতে হবে না হলে টাকা নাও পেতে পারেন। কবে আপনারা এই টাকা পাবেন এবং কি কি সতর্কতা মানতে হবে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
তরুণের স্বপ্ন প্রকল্প কী?
তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চালু করেছিলেন ২০২১ সালে COVID-19 অতিমারির পরিপ্রেক্ষিতে। এই সময় সমস্ত ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল তাই ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে সঠিকভাবে শিক্ষা পেতে পারে তার জন্য অনলাইন ক্লাসের জন্য রাজ্যের সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের পড়ুয়াদের ডিজিটাল ডিভাইস কেনার আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন। এই তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক যোগ্য ছাত্রছাত্রী ১০,০০০ টাকা করে পান। এই টাকা সরাসরি ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যাংক একাউন্টে চলে আসে।
কারা এই প্রকল্পের জন্য যোগ্য?
পশ্চিমবঙ্গের তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের টাকা পেতে গেলে আপনাকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে
। এর পাশাপাশি সরকারি বা সরকার সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের ১১ শ্রেণির ছাত্রছাত্রী হতে হবে। পরিবারের বার্ষিক আয় হতে হবে সাধারণ সীমার নিচে (সাধারণত ₹২ লক্ষ)। যদি কোন ছাত্র বা ছাত্রী এর আগে এই প্রকল্পের টাকা পেয়ে না থাকেন এবং নিজের নামে ব্যাংক একাউন্ট থাকলেই এই প্রকল্পে টাকা পাওয়া যাবে।
আবেদন পদ্ধতি –
১. আবেদন ফর্ম পূরণ:
প্রথমেই ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয় থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এরপর আবেদন পত্রটির নির্ভুলভাবে ফিলাপ করতে হবে যেখানে নিজের নাম, ঠিকানা, বিদ্যালয়ের নাম, শ্রেণী, রোল নম্বর, মোবাইল নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর (IFSC সহ) সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। এরপর বিদ্যালয়ে জমা দিতে হবে।
২. বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের যাচাই:
বিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকারা প্রতিটি পড়ুয়ার তথ্য “বাংলার শিক্ষা পোর্টাল”-এ আপলোড করবেন। এই আপলোডের সময় ব্যাংক ডিটেলস, মোবাইল নম্বর, জন্মতারিখ ইত্যাদি সঠিক হওয়া আবশ্যক। কোন ভুল থাকলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্র-ছাত্রীদের তখনই সেটি সংশোধন করে নিতে বলবেন।
৩. OTP যাচাই:
বাংলার শিক্ষা পোর্টালে আবেদন করার সময় ছাত্রছাত্রীর মোবাইলে আসবে একবার ব্যবহারযোগ্য OTP। তাই অতি অবশ্যই OTP যাচাই করে নিতে হবে।
৪. তথ্য যাচাই সম্পূর্ণ হলে:
সমস্ত তথ্য প্রমাণ সঠিক হলে এবং যাচাই সফল হলে ছাত্রছাত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১০,০০০ টাকা স্থানান্তর করা হবে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে
তবে ছাত্র-ছাত্রীদের এই ভুলগুলো করলে টাকা মিলবে না
- ভুল IFSC কোড বা অ্যাকাউন্ট নম্বর ভুল দিলে টাকা যাবে অন্য অ্যাকাউন্টে
- ভুয়ো তথ্য দিলে আবেদন বাতিল হবে এবং ভুল তথ্য দিয়ে অন্যের একাউন্টে টাকা ঢুকলে কেস হয়ে যেতে পারে।
- OTP যাচাই না করলে আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না
- শেষ তারিখের আগে ফর্ম না জমা দিলে টাকা মিলবে না
- নাম-ঠিকানায় ভুল থাকলে টাকা আটকে যেতে পারে
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ₹১০,০০০ (ট্যাব বা স্মার্টফোন কেনার জন্য) টাকা পাওয়া যাবে। এখানে আবেদনের শেষ তারিখ হচ্ছে ৩১ আগস্ট, ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত এবং এখানে ব্যাংক একাউন্টে টাকা দেওয়া শুরু হবে ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ থেকে।
কেন তরুণের স্বপ্ন প্রকল্প এত গুরুত্বপূর্ণ?
বর্তমান দিনে শিক্ষাব্যবস্থা অনলাইনের মাধ্যমে সর্বাপেক্ষা বহুল প্রচলিত। কোচিং সেন্টার গুলোতে বর্তমান অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে। তাই আপনি যদি উচ্চ শিক্ষার কল্পনা করতে চান বা কোন উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হওয়ার জন্য আগে থেকে কোন কোর্স করেন তাহলে অনলাইন ছাড়া কোন গতি নেই। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের কথা চিন্তা করে অনেক দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়ে যাদের মোবাইল বা ট্যাপ কেনার সামর্থ্য নেই এবং পড়াশোনার দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ছে তাদের কথা চিন্তা ভাবনা করেই রাজ্য সরকার এই প্রকল্প শুরু করেছেন । এই প্রকল্প শুধুমাত্র টাকা দেওয়া নয়, বরং “শিক্ষার ডিজিটাল অধিকার” নিশ্চিত করার এক দুর্দান্ত পদক্ষেপ। এর ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বপ্নপূরণ হচ্ছে এবং তারা Zoom, Google Meet, YouTube-এর মত প্ল্যাটফর্মে ক্লাস করতে পারছে।
২০২৪ সালে আমরা দেখেছিলাম অনেক ভুল একাউন্টে টাকা ঢুকে গিয়েছিল তাই এবার রাজ্য সরকার আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছে এবং OTP যাচাই করনের মাধ্যমে বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে। OTP দিতে না পারলে টাকা ঢুকবে না। তাই এ বছর ভালোভাবে তথ্য যাচাই করণের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের একাউন্টে টাকা দেওয়া হবে।
এই তরুণের স্বপ্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা ডিজিটালাইজেশন সম্পর্কে সতর্ক হয় এবং বর্তমান ডিজিটাল যুগে তারাও ডিজিটালভাবে পড়াশোনা করতে পারে। তরুণের স্বপ্ন প্রকল্প কেবলমাত্র আর্থিক অনুদান নয়, বরং শিক্ষার রূপান্তর ঘটানোর একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। ডিজিটাল ডিভাইস বর্তমান আর বিলাসিতা নয় এটি হলো শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম। তাই ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে এবং ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে পড়াশোনা করতে পারে এই উদ্দেশ্যেই রাজ্য সরকার এই প্রকল্প চালু করেছেন।
আরও পড়ুন:
- BSNL-এর ১ টাকার ধামাকা প্ল্যান – ৩০ দিনের জন্য আনলিমিটেড কল ও ডেটা!
- LIC বিমা সখী প্রকল্প – প্রতি মাসে আয় করুন ৭০০০ টাকা

My name is Sujit Roy, and I have been involved in content writing for the past four years. I provide various types of informative content for users.