দীর্ঘদিন ধরে চলছিল বিতর্ক। অবশেষে বাংলায় শুরু হতে যাচ্ছে নিবিড় ভোটার তালিকা সংশোধন(SIR) ২০২৫। ভারতীয় গণতন্ত্রে ভোটার তালিকায় নাম থাকা শুধুমাত্র ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণ নয় বরং এটি ভোটাধিকার এবং ভারতের দায়িত্ববান নাগরিক ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের মূল ভিত্তি। তাই ভোটার তালিকার নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ ও সংশোধন করা হবে। আপনি যদি একজন পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার জেনে নেওয়া দরকার কি কি ডকুমেন্টস আপনার থাকতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহারে হয়েছিল ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ বা SIR (Special Intensive Revision), যা দেশের রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এবার এই প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে, যার মাধ্যমে ভোটার তালিকা থেকে মৃত ব্যক্তির নাম বাদ প্রয়োজনীয় নথি যাচাই এবং ভুয়া নাম মুছে ফেলা ও যাদের নতুন নাম সংযোজন করা হয়েছে তাদের যথাযথ পর্যবেক্ষণ করা হবে।
SIR আসলে কী?
ভারতীয় নির্বাচন কমিশন বেশ কিছু বছর পর পর ভোটার তালিকার নিবিড় সমীক্ষা চালায়, যাতে তালিকাটি সঠিক, হালনাগাদ ও নির্ভুল থাকে। এর ফলে অনেক মৃত ব্যক্তির নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় এছাড়াও যে সমস্ত নতুন নাম সংযুক্ত হয়েছে সেগুলো তথ্য প্রমাণ নতুন করে বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। এছাড়াও যে সমস্ত ব্যক্তিরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে গিয়েছে সেই সমস্ত ব্যক্তিদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
এই ভোটার তালিকা নিবিড় সমীক্ষা (SIR) – এর বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে
- প্রথম ধাপ: ভোটার তালিকা যাচাই ও নথি সংগ্রহ করা হয়।
- দ্বিতীয় ধাপ: এরপর সেগুলো বুথ স্তরে যাচাই। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সেগুলোর তৃতীয় ধাপে পর্যবেক্ষণের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
- তৃতীয় ধাপ: তৃতীয় ধাপে এই সমস্ত ডকুমেন্টসগুলো জেলা ও রাজ্য স্তরে যাচাই শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ।
ইতিমধ্যেই বিহারে সর্বশেষ SIR হয়েছিল ২০০৩ সালে। এবার ২২ বছর পর বিহারে আবার নতুন করে এই প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। এখানে সমীক্ষা করার পরে চোখ কপালে উঠেছে নেটিজেনদের। যেখানে দেখা যাচ্ছে প্রথম ধাপেই ৫২ লক্ষ নাম বাদ পড়ে, পরে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৬ লক্ষে। কমিশনের হিসাবে, এদের মধ্যে প্রায় ২১.৫ লক্ষ মৃত, ৩১ লক্ষ স্থানান্তরিত এবং প্রায় দেড় লক্ষের নাম একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে রয়েছে। তাই এই সমীক্ষায় অনুমান করা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গেও প্রচুর নাম বাদ যাবে।
এই SIR নিয়ে কেন এখন বিতর্ক?
এই ভোটার তালিকা সমীক্ষা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। তবে এই বিতর্ক তৈরি হওয়ার পিছনে মূল কারণ হলো- অনেকে মনে করছেন এই সমীক্ষা প্রক্রিয়াটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে করা হচ্ছে, এর ফলে অনেক পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নথি জমা দেওয়া কঠিন করে তুলছে। এছাড়াও বিহারে সামনেই রয়েছে নির্বাচন এবং এই নির্বাচনের মাত্র তিন মাস আগে এই উদ্যোগ রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ তুলতে বাধ্য করছে। অনেকে ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও তাদের কাছে প্রয়োজনীয় নথি নেই বা সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না, ফলে প্রকৃত ভোটারও বাদ পড়তে পারেন। এর ফলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, বিজেপি বলছে এটি মূলত ভোটার তালিকার “সাফাই” অভিযান, যা গণতন্ত্রকে আরও সঠিক ও স্বচ্ছ করবে এবং ভুয়া নাম বাদ যাবে।
যে সমস্ত ডকুমেন্টস প্রয়োজনীয়তা
কমিশন বিহারের জন্য যে ১১টি নথি গ্রহণযোগ্য করেছে। বাংলার জন্য সেই নথিগুলি গ্রহণযোগ্য হবে। আপনার কাছে যদি এই সমস্ত নথিগুলো থেকে থাকে তাহলে আপনার কোন চিন্তার কারণ নেই। তবে আপনার কাছে যদি না থাকে তাহলে সমীক্ষার আগেই আপনি আপনার ডকুমেন্টস গুলো রেডি করতে পারেন। এগুলি হল—
- কেউ যদি সরকারি কর্মী হয়ে থাকেন বা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী হয়ে থাকেন তাহলে তার অফিসিয়াল প্রমাণ পত্র।
- যদি কোন ব্যক্তির ১ জুলাই ১৯৮৭ সালের আগের সরকারি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নথি থাকে তাহলে সেটি বৈধ।
- এছাড়াও থাকতে হবে জন্ম সনদ অর্থাৎ বার্থ সার্টিফিকেট।
- যদি কারো কাছে বৈধ পাসপোর্ট থাকে তাহলে সেটিও বৈধ।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র যেখানে জন্ম তারিখ উল্লেখ করা থাকবে।
- স্থায়ী বসবাসকারী ব্যক্তির স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণ পত্র।
- যদি তফসিলি জাতি/উপজাতি/ওবিসি প্রার্থী হয়ে থাকেন তাহলে তার শংসাপত্র।
- যদি কারো এনআরসি তালিকায় নাম থাকে তাহলেও সে বৈধ।
- বনাঞ্চলের অধিকারের সনদ।
- স্থানীয় প্রশাসনের পারিবারিক রেজিস্টার।
- সরকার প্রদত্ত জমি বা বাড়ির নথি।
তবে এখানে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে পশ্চিমবঙ্গে শেষবার ২০০২ সালে SIR হয়েছিল তাই কারো নাম যদি ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় থেকে থাকে তাহলে তার চিন্তার কোন কারণ নেই এবং তাকে শুধুমাত্র ২০০২ সালের ভোটার তালিকার জেরক্স দেখালেই হয়ে যাবে।
তবে এক্ষেত্রে আপনি আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ড দেখালে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট কমিশনকে আধার, ভোটার আইডি (EPIC) ও রেশন কার্ড গ্রহণযোগ্য করতে বলেছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সেগুলো গ্রহণ করেনি।
কারা প্রভাবিত হবেন?
পশ্চিমবঙ্গে সর্বশেষ SIR হয়েছিল ২০০২ সালে। তাই এই সমীক্ষায় সকলেই প্রভাবিত হবেন না। যাদের নাম ২০০২ সালের আগের ভোটার তালিকায় রয়েছে তাদের কোন কিছু করতে হবে না এবং তারা কোনোভাবেই প্রভাবিত হবে না। তাই এক্ষেত্রে সব প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রভাবিত হবেন না। মূলত ২০০৩ সালের পর যাঁদের নাম সংযোজন হয়েছে, তাঁদেরকেই যাচাই প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে।
SIR একটি প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া, যা ভোটার তালিকাকে সঠিক রাখে। এর ফলে ভোটার তালিকায় যেমন স্বচ্ছতা থাকে তেমনি কেন্দ্র সরকার ও রাজ্য সরকারের কাছে সঠিক নাগরিকত্বের হিসেব থাকে। তবে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, পর্যাপ্ত সময় এবং সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ করা একান্ত জরুরি। ইতিমধ্যেই বিহারে যে সমস্যা হয়েছে সেই সমস্যা যাতে পশ্চিমবঙ্গে না হয় এর জন্য বিহারের এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্য রাজ্যে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে, ভবিষ্যতে আরও ভারসাম্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ করা যেতে পারে।

My name is Bongo Sambad, and I have been involved in content writing for the past four years. I provide various types of informative content for users.