সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে বড় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপনার কাছে যদি আধার কার্ড থেকে থাকে তাহলে আর আপনার কোন চিন্তা নেই। এবার আধার কার্ডকে মান্যতা দিল সুপ্রিম কোর্ট। আধার কার্ড থাকলেই আপনি ভোটার তালিকা সংশোধনে বৈধ হতে পারেন। এতদিন ধরে আধার কার্ড কে ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য অবৈধ বলা হলেও এবার আধার কার্ডকে মান্যতা দিল সুপ্রিম কোর্ট। আধার কার্ড থাকলেই আপনি আবেদন জানাতে পারবেন। তাহলে সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে কি বলল এবং আধার কার্ড থাকলেই কি সকলে বৈধ চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ইতিমধ্যেই দীর্ঘদিন ধরে বিহারের ভোটার তালিকা নিয়ে চলমান বিতর্কে এবার গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, খসড়া ভোটার তালিকায় অর্থাৎ নতুন করে সংশোধনী ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম বাদ পড়েছে বা নেই, তাঁরা এখন আধার বা অন্যান্য পরিচয়পত্র ব্যবহার করে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন, এতদিন পর্যন্ত আধার কার্ড ব্যবহার করে নতুন করে আর আবেদন করা যাচ্ছিল না তবে এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আধার কার্ড থাকলেও আপনি আবেদন জানাতে পারবেন। আদালতের এই রায় ভোটারদের কাছে এক বড় স্বস্তি, কারণ এর ফলে নাম তুলতে আর সশরীরে গিয়ে ঝক্কি পোহাতে হবে না। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গেও কিছুদিন পরে শুরু হতে যাচ্ছে ভোটার তালিকা সংশোধনী এবং এক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
কেন এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে এল?
বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ ও নিবিড় সংশোধন (Special and Intensive Revision – SIR) প্রক্রিয়ায় অভিযোগ উঠেছিল যে বহু ভোটারের নাম ভুলভাবে বাদ গেছে। অনেক লোক বিহারের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও তাদের নাম বাদ পড়ে গিয়েছে ভোটার লিস্ট থেকে। বিশেষত পরিযায়ী শ্রমিক, গ্রামীণ ভোটার এবং দরিদ্র পরিবার এই সমস্যার শিকার। কারণ তারা উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ এবং নথি দেখাতে পারেনি। এর ফলে দেখা গিয়েছে-
- বাদ পড়া নামের সংখ্যা কয়েক লাখ প্রায় ৬০ লাখ।
- ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার অভিযোগে একাধিক মামলা হয়। যাদের নাম বাদ পড়েছে তারা সকলে একত্রিত হয়ে মামলা দায়ের করেন।
- অবশেষে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে ওঠে এবং আদালত প্রক্রিয়াটি ভোটারবান্ধব ও স্বচ্ছ রাখার নির্দেশ দেয়।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান নির্দেশিকা
শুক্রবার বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী-র বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়। আদালত যে নির্দেশগুলো দিয়েছে তা হলো—
- অনলাইনে আবেদন করার সুযোগ: যাদের নাম বাদ পড়েছে তারা ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন জানানোর সুযোগ পেয়ে যাবেন।
- আবেদনের শেষ তারিখ: ইতিমধ্যে যাদের নাম বাদ পড়েছে তারা ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত অনলাইনে আবেদনের সুযোগ পাবেন।
- BLO-র দায়িত্ব: বুথ লেভেল অফিসারের কাছে ফর্ম জমা দিলে রসিদ দিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে রসিদ মানেই আবেদন গৃহীত হয়েছে—এমন নয়।
- পরিচয়পত্র জমা: আধার বা মোট ১১টি স্বীকৃত পরিচয়পত্রের যেকোনও একটি ব্যবহার করা যাবে। এতদিন পর্যন্ত আধার কার্ড কে মান্যতা না দিলেও এবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আধার কার্ডকে মান্যতা দেওয়া হলো
- সময়ের সুযোগ: যদি সঙ্গে সঙ্গে সব নথি দেওয়া সম্ভব না হয়, তবে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে।
- অনলাইনে রেকর্ড: কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জমা পড়া সব রসিদ অনলাইনে প্রকাশ করতে।
কোন কোন নথি দিয়ে আবেদন করা যাবে?
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ভোটাররা যে ১১ তে নথীর কথা বলা হয়েছিল সেগুলি পরিচয়পত্র ব্যবহার করে আবেদন করতে পারবেন। তবে এর পাশাপাশি এবার আধার কার্ড কামানো তা দিল সুপ্রিমকোর্ট এবং আধার কার্ড ব্যবহার করে আবেদন জানালেও তা গ্রহণযোগ্য হবে।
কমিশনের বক্তব্য
নির্বাচন কমিশন আদালতে তাদের পক্ষ তুলে ধরে জানায়—
- ভুলবশত বাদ পড়া নামগুলো ফেরত আনার সুযোগ দেওয়া হবে। তাই কেউ চিন্তা করবেন না এবং আতঙ্কিত হবেন না।
- সব থানা ও পঞ্চায়েতে বাদ পড়াদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এবং তাদের নতুন করে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হবে।
- এখন পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দল আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জমা দেয়নি।
- ১.৬৭ লক্ষ এজেন্টকে তালিকা দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন ১০টি করে নাম যাচাই হচ্ছে। এর ফলে খুব শীঘ্রই নতুন করে নথি যাচাই সম্পন্ন হবে এবং ৬৫ লক্ষ নাম যাচাই করতে মাত্র ৪–৫ দিন লাগবে।
বাদ পড়া ভোটারদের সমস্যা
মামলাকারীদের মধ্যে অন্যতম আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আদালতে জানান— প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক যারা কাজের জন্য বাইরে গিয়েছে তাদের নাম বাদ পড়েছে এছাড়াও তারা কাজের সূত্রে বাইরে থাকার জন্য তাদের নাম তোলার সুযোগ পাচ্ছে না এর ফলে এই বাদ পড়া নামগুলি প্রধান সমস্যা সৃষ্টি করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের তরফ থেকে জানানো হয় এজেন্টরা অবশ্যই গ্রামীণ মানুষদের চেনেন তাহলে কেন তারা বাদপাড়া নামের বিষয়ে তথ্য দিচ্ছেন না। আদালত প্রতিক্রিয়া জানায় যে, এজেন্টরা গ্রামীণ মানুষদের চেনেন। তাহলে কেন তারা বাদ পড়া নামের বিষয়ে তথ্য দিচ্ছেন না, সেটি প্রশ্নবিদ্ধ।
যাদের নাম একবার বাদ পড়ে যাবে তাদের আবার পুনরায় নাম তোলার সুযোগ দেওয়া হবে যেটি সকলেরই গণতান্ত্রিক অধিকার। এছাড়াও অনলাইনে আবেদন করার সুবিধা থাকায় সময়, খরচ ও ঝামেলা কমবে। আদালতের রায় ভোটার তালিকা প্রক্রিয়াকে “আরও স্বচ্ছ ও আধুনিক” করে তুলবে। এর ফলে রাজ্য তথা কেন্দ্র থেকে অবৈধ ভোটার বাদ যাবে এবং বৈধ যারা ভোটার রয়েছে তারা অবশ্যই ভোটার লিস্টে স্থান পাবে।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় বিহারের ভোটারদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। শুধুমাত্র বিহার নয় এটি পরবর্তীকালে অন্যান্য রাজ্য এমনকি পশ্চিমবঙ্গের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়াটি হতে হবে ভোটারবান্ধব। অনলাইনে আবেদন ও একাধিক পরিচয়পত্র গ্রহণের সুযোগ দেওয়ায় সাধারণ মানুষ সহজেই নিজের নাম তালিকায় তুলতে পারবেন। রাজনৈতিক দল ও কমিশনের উচিত একযোগে কাজ করে এই প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করা। এই সংশোধনের বিরোধিতা না করে সকলেরই এগিয়ে আসতে হবে স্বচ্ছ ভাবে সংশোধন করার জন্য।

My name is Sujit Roy, and I have been involved in content writing for the past four years. I provide various types of informative content for users.