ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় এলো আমুল এক পরিবর্তন। এবার কেন্দ্র সরকার নতুন একটি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করেছে যেখানে ছাত্রছাত্রীরা বই দেখে পরীক্ষা দিতে পারবেন। তাই এতদিন পর্যন্ত পরীক্ষা নিয়ে যাদের মনে ভয় ভীতি ছিল এবার সেটা আর থাকবে না। সকলেই পরীক্ষা দিয়ে পাস করে যাবেন তাই ফেল হওয়ার কোন ভয় থাকবে না কারণ দেখে দেখে সকলেই লিখতে পারবেন। তবে কিভাবে বই দেখে পরীক্ষা দেওয়া যাবে এবং সে ব্যাপারে শিক্ষা দপ্তর কি বলছে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

Open Book Exam 2026
Open Book Exam 2026

ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড়সড় পরিবর্তনের পথে হাঁটছে সরকার। ২০২৬ সাল থেকে CBSE বোর্ডে শুরু হচ্ছে “Open Book Exam” বা খোলা বই পরীক্ষা। অর্থাৎ এই পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে বই খুলে দেখে দেখে লিখতে পারবেন ছাত্রছাত্রীরা। এর ফলে পরীক্ষা নিয়ে ভয় ভীতি দূর হয়ে যাবে ছাত্র-ছাত্রীদের মনে। এছাড়াও না বুঝে মুখস্ত করে লেখার যে প্রবণতা ছিল সেটা আর থাকবে না। তবে এটি মোটেও মুখস্ত করা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সহজ পরীক্ষা নয়, বরং বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা ও বিশ্লেষণী দক্ষতা গড়ে তোলাই এই ব্যবস্থার আসল উদ্দেশ্য। না বুঝে মুখস্ত করে লেখার থেকে এই পরীক্ষা পদ্ধতি অনেক শ্রেষ্ঠ এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজে এই পদ্ধতি চালু রয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ (NEP 2020) এবং ন্যাশনাল কারিকুলাম ফ্রেমওয়ার্ক ফর স্কুল এডুকেশন (NCFSE 2023)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। তবে এটি ছাত্রছাত্রীদের জন্য ভীষণ উপকার করলেও এখনো পর্যন্ত অভিভাবকেরা এই পদ্ধতি মেনে নিতে পারছে না।

কেন চালু হলো Open Book Exam?

প্রশাসনের এবং শিক্ষা দপ্তরের মূল লক্ষ্য হলো—

  • ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক সময় না বুঝে মুখস্ত করে পরীক্ষা দেয় যার ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্রেইন্টের উপরে চাপ পড়ে, তাই এই পদ্ধতির মাধ্যমে মুখস্থ বিদ্যার চাপ কমানো।
  • ছাত্রছাত্রীদের বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও সমালোচনামূলক চিন্তা গড়ে তোলা। তাই ছাত্র-ছাত্রীরা বই দেখে নিজের মতো করে বানিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে।
  • বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধান শেখানো। এর ফলে বাস্তব জীবনে যে সমস্ত সমস্যায় পড়বে তারা তা খুব সহজেই সমাধান করতে পারবে এবং নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে।
  • কেবল নম্বরের জন্য মুখস্থ না করে, বিষয়ের গভীর জ্ঞান অর্জনে উৎসাহ দেওয়া। এর ফলে আর কেউ না বুঝে মুখস্থ করতে চাইবে না এবং গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে পড়াশোনার উপর জোর দেবে।

 Open Book Exam এর নিয়ম কীভাবে হবে?

এই পদ্ধতিতে যতটা সহজ পরীক্ষা মনে হচ্ছে ততটাও কিন্তু নয়। এখানে বই খুলে পরীক্ষা দেওয়া যাবে ঠিকই কিন্তু এখানে প্রশ্নের ধরন হবে একটু অন্য রকমের-

  • পরীক্ষার প্রশ্ন হবে কনসেপ্ট ভিত্তিক ও প্রয়োগমুখী। তাই বই দেখে পুরোপুরি লিখলে চলবে না বই দেখে কনসেপ্ট নিয়ে নিজের মতো করে লিখতে হবে।।
  • উত্তর সরাসরি বই থেকে কপি করা যাবে না। বই থেকে যেটা লেখা থাকবে সেটার মত করে এবং নিজে থেকে কিছু তথ্য প্রয়োগ করে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
  • বইয়ের সূত্র, উদাহরণ বা রেফারেন্স ব্যবহার করে নিজস্ব বিশ্লেষণ লিখতে হবে। তবে যাই হোক এখানে মুখস্ত বিদ্যার উপর চাপ কমবে এবং শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে।

এই পরীক্ষা পদ্ধতিতে যে ধরনের প্রশ্নপত্র তৈরি করা হবে সেগুলি হল —

    • বিশ্লেষণধর্মী
    • তুলনামূলক
    • যুক্তিভিত্তিক
    • বাস্তব জীবনের উদাহরণের সঙ্গে যুক্ত

অর্থাৎ, খোলা বই পরীক্ষা মানেই সহজ নয়। বরং ছাত্রছাত্রীদের সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি কাজে লাগাতে হবে। এখানে বই রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন এবং পরীক্ষায় যে সমস্ত প্রশ্ন থাকবে সেগুলো বই থেকে রেফারেন্স নিয়ে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা প্রয়োগ করে লিখতে পারবেন।

সুবিধা

ছাত্রছাত্রীদের জন্য:

এই পরীক্ষার পদ্ধতির বিভিন্ন ধরনের সুবিধা রয়েছে এবং সরকার বিভিন্ন দিক চিন্তা ভাবনা করে নতুন শিক্ষানীতি তে এই পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে এসেছে। শুধুমাত্র আমাদের দেশে নয় বিভিন্ন বড় বড় উন্নত দেশগুলোতে স্কুল কলেজ ইউনিভারসিটি তেও এই ওপেন বুক এক্সামিনেশন পদ্ধতি চালু রয়েছে। এই পরীক্ষা পদ্ধতির ফলে যে সমস্ত সুবিধা হবে সেগুলি হল-

  • মুখস্থ বিদ্যার উপর নির্ভরশীলতা কমবে।
  • বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা ও জ্ঞান বাড়বে।
  • সমস্যার সমাধান করার দক্ষতা গড়ে উঠবে।
  • চাপমুক্ত থেকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরীক্ষা দেওয়া যাবে।
  • পরীক্ষার ভীতির ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্য থেকে দূর হয়ে যাবে।

অসুবিধা

  • নতুন পদ্ধতি হওয়ায় অনেক ছাত্রছাত্রী বিভ্রান্ত হতে পারে। এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে।
  • শুধুমাত্র বই থাকলেই উত্তর দেওয়া সম্ভব, তাই যারা প্রস্তুতি নেবে না তাদের সমস্যা বাড়তে পারে।
  • শিক্ষকদেরও নতুন ধাঁচে পড়ানো শিখতে হবে। এর ফলে শিক্ষকদেরও বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
  • পরীক্ষার সময় ব্যবস্থাপনা (Time Management) অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে। কারণ মুখস্ত করে লিখলে যত কম সময় লাগে দেখে দেখে লিখলে তার থেকে অনেক বেশি সময় লাগে।

পরীক্ষার ধরনে আসছে পরিবর্তন

CBSE ঘোষণা করেছে, ২০২৬-২৭ সাল থেকে ধাপে ধাপে ওপেন বুক পরীক্ষা চালু হবে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে CBSC বোর্ড এই পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করলেও পরবর্তীকালে সমগ্র রাজ্যের বোর্ড গুলি এই পদ্ধতি চালু করে দিতে পারে। ভবিষ্যতে অন্যান্য বোর্ডও যদি দেখেন এটি ছাত্রছাত্রীদের উপকার করছে, তাহলে তারাও একই পথ অনুসরণ করতে পারে।

তবে এই পরীক্ষা পদ্ধতির যতটা সহজ মনে হচ্ছে ততটা সহজ নাও হতে পারে কারণ প্রশ্নপত্রের ধরনে কিছু পরিবর্তন আসবে:

  • সরাসরি বইয়ের মধ্যে উত্তর থাকবে না। বই থেকে রেফারেন্স নিতে পারবেন কিন্তু উত্তর লিখতে হবে নিজের ধাসে এবং নিজের বিশ্লেষণ ক্ষমতাকে প্রয়োগ করে।
  • সূত্র বা নিয়ম থাকবে, যেগুলো প্রয়োগ করে উত্তর লিখতে হবে। এর ফলে সূত্র মুখস্ত করার আর প্রবণতা থাকবে না।
  • ছাত্রছাত্রীদের বাস্তব উদাহরণ ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ ব্যবহার করতে হবে।

ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় এটি নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এই পদ্ধতি চালু হলে ছাত্র-ছাত্রীদের মুখস্ত করে পড়ার ঝোঁক কমে যাবে এবং বুঝে বুঝে পড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মাবে। মুখস্থ বিদ্যার চাপ থেকে বেরিয়ে এসে এবার ছাত্রছাত্রীদের গভীর চিন্তা, বিশ্লেষণ ও বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ তৈরি হলো।

শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রী—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এই নতুন পরীক্ষাপদ্ধতির জন্য। যদি এটি সফল হয়, তবে ভবিষ্যতে অন্যান্য বোর্ডও এই Open Book Exam System চালু করতে পারে।