পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রে ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছিল। এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা বোর্ড (WBJEEB) এবং কলকাতা হাইকোর্ট। WBJEEB প্রথমে ৬৬টি পুরোনো ওবিসি ক্যাটাগরির পাশাপাশি আরও নতুন ১৪০টি ক্যাটাগরিকে যুক্ত করে ফলাফল প্রকাশের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্তকে ঘিরেই জটিলতার সূত্রপাত হয়। এবার এই নিয়ে এলো বিশাল বড় একটি রায়।
কলকাতা হাইকোর্ট WBJEEB-এর পদক্ষেপে আপত্তি জানিয়ে একাধিক আদেশ জারি করে। হাইকোর্ট জানায় যে এই পদ্ধতি পূর্ববর্তী রায়ের পরিপন্থী এবং সংরক্ষণ নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যদিও WBJEEB সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি নিয়ে ফলাফল প্রকাশ এবং ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করে, পরবর্তীতে হাইকোর্টের নতুন নির্দেশ তাদের আবারও শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য করে। কি হবে এবং ভর্তি প্রক্রিয়ায় কাদের জায়গা দেওয়া হবে এই নিয়ে চলছে এখনো দ্বন্দ্ব।
কলকাতা হাইকোর্টের আদেশ
কলকাতা হাইকোর্ট একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে WBJEEB-এর পদক্ষেপকে অগ্রহণযোগ্য বলে জানায়। বিশেষত, মেধাতালিকা প্রস্তুতির প্রক্রিয়াকে আদালতের পূর্ববর্তী রায়ের লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
তারিখ | বিচারপতি | আদেশের সারমর্ম |
---|---|---|
২১ মে, ২০২৫ | একক বেঞ্চ | WBJEEB-এর মেধাতালিকা আদালতের পূর্ববর্তী আদেশ লঙ্ঘন করেছে। |
৭ আগস্ট, ২০২৫ | বিচারপতি কৌশিক চন্দ | নতুন ক্যাটাগরি অন্তর্ভুক্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। |
২২ মে, ২০২২ | ডিভিশন বেঞ্চ | শুধুমাত্র ৬৬টি ওবিসি শ্রেণীকে বৈধ ঘোষণা করে ৭% সংরক্ষণ প্রদানের নির্দেশ। |
এই রায় অনুযায়ী WBJEEB-কে বাধ্য করা হয়েছিল নতুন মেধাতালিকা প্রকাশ করতে, যা শুধুমাত্র বৈধ ঘোষিত ৬৬টি ওবিসি ক্যাটাগরির ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা
এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদালত প্রথমে WBJEEB-কে ফলাফল প্রকাশের অনুমতি দিলেও, ওবিসি ‘বি’ সার্টিফিকেটের বৈধতা নিয়ে কোনো নতুন রায় দেয়নি। এর মানে হলো, কলকাতা হাইকোর্টের পূর্ববর্তী নির্দেশ কার্যকর থাকছে।
এছাড়াও, বিচারপতি বি.আর. গাভাইয়ের বেঞ্চে বর্তমানে একটি পৃথক মামলা চলছে যেখানে ৭৪টি নতুন ওবিসি ক্যাটাগরির বৈধতা নিয়ে শুনানি হচ্ছে। এই মামলা এবং WBJEEB-এর নতুন আবেদন—দুটিই মিলিয়ে রাজ্যে সংরক্ষণ নীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
WBJEEB-এর স্পেশাল লিভ পিটিশন (SLP)
WBJEEB পুনরায় সুপ্রিম কোর্টে Special Leave Petition (SLP) দায়ের করেছে। এর মাধ্যমে বোর্ড মূলত দুটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাইছে—
- নতুন ১৪০টি ওবিসি ক্যাটাগরির বৈধতা আদালত মেনে নেবে কি না।
- ভর্তি প্রক্রিয়ার জন্য পুরোনো ৬৬টি ক্যাটাগরি অনুসরণ করতে হবে কি না।
এই প্রশ্নগুলির উত্তর সুপ্রিম কোর্টের রায়েই মিলবে।
ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা
এই মামলার কারণে WBJEE পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী মারাত্মক অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। একদিকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলেও আদালতের রায়ে পরিবর্তন হলে আবারও সমস্যা তৈরি হতে পারে। সংরক্ষণের আওতায় পড়া প্রার্থীরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন—কারণ বৈধতার প্রশ্নে তাদের সুযোগ সংকুচিত হতে পারে।
সংরক্ষণ নীতি নিয়ে বড় প্রশ্ন
ভারতের সংবিধানে শিক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নীতি। কিন্তু নতুন ক্যাটাগরির বৈধতা নিয়ে বিতর্ক দেখাচ্ছে যে, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং প্রশাসনিক প্রক্রিয়া আইনি জটিলতায় আটকে গেলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উপর তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। এই মামলাটি প্রমাণ করছে যে সঠিক সংরক্ষণ নীতি বাস্তবায়নের জন্য কেবল রাজনৈতিক সদিচ্ছাই নয়, আদালতের সুনির্দিষ্ট অনুমোদনও জরুরি।
সুপ্রিম কোর্টের আসন্ন রায় হবে এই মামলার চূড়ান্ত মোড়। আদালত যদি নতুন ক্যাটাগরিগুলিকে বৈধ ঘোষণা করে, তবে রাজ্যের সংরক্ষণ নীতি আরও বিস্তৃত হবে। অন্যদিকে, যদি শুধুমাত্র ৬৬টি পুরোনো ক্যাটাগরিই বৈধ থাকে, তবে বহু প্রার্থী তাদের সুবিধা হারাবেন।
রাজ্যের ভর্তি প্রক্রিয়া যাতে ব্যাহত না হয়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে আদালতকে। কারণ, প্রতি বছর হাজার হাজার মেধাবী ছাত্রছাত্রী এই পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ খোঁজেন।
ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের এই মামলা শুধুমাত্র একটি পরীক্ষার মেধাতালিকা সংক্রান্ত নয়, বরং এটি শিক্ষা ব্যবস্থার ন্যায্যতা ও সংবিধানসম্মত সুযোগ নিশ্চিত করার লড়াই।

My name is Bongo Sambad, and I have been involved in content writing for the past four years. I provide various types of informative content for users.