পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সবথেকে জনপ্রিয় প্রকল্প হলো লক্ষী ভান্ডার প্রকল্প। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর জন্য একাধিক কল্যাণমূলক প্রকল্প চালু করেছেন। এর মধ্যে মহিলাদের জন্য এই ভাতা প্রকল্প সবচেয়ে আলোচিত ও বহুল প্রচলিত। এই প্রকল্পে সকল মহিলাদের টাকা দেওয়া হয় তাই এটি সর্বপেক্ষা বহুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে সাধারণ জাতিভুক্ত মহিলারা মাসে ১,০০০ টাকা এবং তপশিলি জাতিভুক্ত মহিলারা মাসে ১,২০০ টাকা পান। তবে সম্প্রতি জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে যে এই ভাতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে সামনেই রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যে আমরা দেখতে পেয়েছিলাম লোকসভা নির্বাচনের আগে লক্ষী ভান্ডার প্রকল্পে ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিল। তাই অনেকে মনে করছেন বিধানসভা নির্বাচনের আগে পুনরায় আবারও লক্ষী ভান্ডার প্রকল্পে ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে।

অনেকে মনে করছেন, দুর্গাপুজোর আগে যদি সত্যিই এই ঘোষণা আসে তবে তা মহিলাদের জন্য এক বড় স্বস্তি এবং আনন্দের বার্তা হবে। কারণ রাজ্যের কয়েক কোটি মহিলা প্রতিমাসে এই প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য পান, যা সংসারের খরচ চালাতে বা অন্তত নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটাতে কিছুটা হলেও সহায়ক। তাই এই প্রকল্পে ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হলে সকলেরই সুবিধা হবে এবং সকলেই ভীষণভাবে উপকৃত হবেন।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সূচনা
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু হয়েছিল ২০২১ সালের আগস্ট মাসে। এরপর থেকে এখনো পর্যন্ত এই প্রকল্প নির্দ্বিদায় এবং বিনামূল্যে সকলেই টাকা পেয়ে যাচ্ছেন। উদ্দেশ্য ছিল—রাজ্যের গৃহবধূদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা নিশ্চিত করা এবং তাদের সংসারে সামান্য হলেও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকেই এটি বিপুল সাড়া ফেলে এবং সমগ্র রাজ্যজুড়ে মহিলারা এই প্রকল্পের সুবিধা লাভ করতে থাকে। অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই লক্ষ লক্ষ মহিলা এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করেন।
শুরুতে সাধারণ জাতিভুক্ত মহিলাদের জন্য ভাতা নির্ধারিত হয়েছিল মাসে ৫০০ টাকা এবং তপশিলি মহিলাদের জন্য ১,০০০ টাকা। তবে পরবর্তীকালে লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিল। বর্তমানে সাধারণ মহিলারা পান মাসে ১,০০০ টাকা এবং তপশিলি মহিলারা পান ১,২০০ টাকা।
কেন ভাতা বাড়ানোর দাবি উঠেছে?
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সর্বত্র দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও রাজ্য সরকার রাজ্যবাসীদের বিভিন্ন ধরনের প্রকল্পের মাধ্যমে আরো বেশি টাকা দিচ্ছেন যেমন সাম্প্রতিক রাজ্য সরকার শ্রমশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যবাসীদের বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের 5000 করে টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তাছাড়াও দেখা যাচ্ছে খাদ্যশস্য, জ্বালানি, গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র—সব কিছুর দামই বেড়ে গিয়েছে। ফলে সংসারের খরচ সামলাতে অনেক বেশি অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তাই দীর্ঘদিন ধরে এই ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধির দাবি উঠেছে।
এমন পরিস্থিতিতে মাসে ১,০০০ বা ১,২০০ টাকার ভাতা খুব সামান্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই ভাতার পরিমাণ অবশ্যই বাড়ানো দরকার এবং এই ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য মহিলারা বারবার সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। তাদের মতে, অন্তত ১,৫০০ থেকে ১,৮০০ টাকা হলে কিছুটা হলেও খরচের চাপ কমবে। তবে এখন দেখার বিষয় সরকার কবে এই ভাতার পরিমাণ বাড়ায় এবং ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে কত টাকা করবে সেটা একান্তই সরকারের উপর নির্ভর করবে।
এছাড়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছেন ২৫ বছর বয়স থেকে শুরু করে সারা জীবন পর্যন্ত এই প্রকল্পের টাকা পাওয়া যাবে বিশেষ করে ৬০ বছর পর্যন্ত এই প্রকল্পের টাকা পাওয়া যাবে এবং ৬০ বছরের বেশি হলে বৃদ্ধ ভাতা পাওয়া যাবে তাই সকল মা বোনেদের তিনি নিশ্চিত থাকতে বলেছেন এছাড়াও আরো বলেছেন এই প্রকল্প কারো জন্য বন্ধ হবে না।
নতুন আবেদনকারীদের ভাতা কবে থেকে মিলবে?
অনেক মহিলাই সম্প্রতি এই প্রকল্পে নতুন করে আবেদন করেছেন। অনেক মহিলার বয়স ২৫ বছরের অধিক হয়ে গিয়েছে তারাও এই প্রকল্পের নতুন করে আবেদন করেছেন এবং যারা এখনো আবেদন করেননি তারা এই প্রকল্পে তাড়াতাড়ি আবেদন করে দিতে পারেন। প্রশ্ন উঠছে, তারা কবে থেকে টাকা পাবেন? তবে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, পুজোর আগে নতুন আবেদনকারীরাও টাকা পেতে শুরু করবেন। তবে সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
ভাতা বৃদ্ধির সম্ভাব্য প্রভাব
ভাতা বৃদ্ধি পেলে রাজ্যের মহিলারা স্বস্তি পাবেন। বিশেষত গরিব ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো উপকৃত হবে। একজন গৃহবধূ যদি মাসে ১,৫০০ বা ১,৮০০ টাকা পান, তবে তিনি সেই টাকা দিয়ে অন্তত পরিবারের দৈনন্দিন বাজার খরচের কিছুটা সামাল দিতে পারবেন। এর ফলে সংসার খরচের জন্য স্বামীর উপর চাপ অনেকটাই কম হবে। মহিলারাও সংসারের কাজে অথবা হাত খরচের জন্য এই টাকা ব্যবহার করতে পারবেন।
আর্থিক দিক থেকে সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ
তবে ভাতা বাড়ানো মানেই রাজ্যের উপর আর্থিক চাপ বাড়বে। বর্তমানে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২ কোটি বেশি মহিলা এই প্রকল্পে যুক্ত আছেন। যদি প্রত্যেকে মাসে অতিরিক্ত ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পান, তবে সরকারের খরচ কয়েক হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত বেড়ে যাবে। ফলে এর জন্য আলাদা করে বাজেট আগে পেশ করতে হবে না হলে অন্য অন্য খাতে কাটছাঁট করতে হবে।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্য সরকারকে এজন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ করতে হবে বা অন্য খাতে কাটছাঁট করতে হবে। তবে রাজনৈতিকভাবে এটি নিঃসন্দেহে সরকারের জন্য বড় ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে।
তবে ২০২৬ এ বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে এবং পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলা যাচ্ছে নির্বাচনের আগে ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এর পাশাপাশি রাজ্যে আরও বিভিন্ন ধরনের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পও চালু হতে পারে যেমন রাজ্যের নতুন করে চালু হলো কর্মশ্রী প্রকল্প যেখানে পরিযায়ী শ্রমিকদের ৫০০০ করে টাকা দেওয়া হবে। তাই এই পরিপেক্ষিতে রাজ্যবাসীদের জন্য লক্ষী ভান্ডার প্রকল্পের টাকা বৃদ্ধি পেতে পারে এই জল্পনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে এটি পুরোপুরি রাজ্য সরকারের উপর নির্ভরশীল। রাজ্য সরকার যদি ঘোষণা করে তাহলেই এই টাকা বৃদ্ধি পাবে নচেৎ নয়।
সব মিলিয়ে বলা যায়, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প রাজ্যের মহিলাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। ভাতা যদি সত্যিই বৃদ্ধি পায় তবে এটি হবে রাজ্যের কোটি কোটি মহিলার জন্য এক বিরাট সুখবর।
যদিও সরকারিভাবে ঘোষণা এখনো আসেনি, তবে রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা খুব শিগগিরই এই খবর নিশ্চিত হবে। এজন্য অবশ্যই রাজ্য সরকারের ঘোষণা বা সরকারি বিজ্ঞপ্তির উপর নির্ভর করতে হবে। তবে আপাতত মহিলারা পূর্বনির্ধারিত ১০০০ টাকা এবং ১২০০ টাকা করেই পেয়ে যাবেন।

My name is Sujit Roy, and I have been involved in content writing for the past four years. I provide various types of informative content for users.