ভারতীয় রেল যাত্রীদের জন্য বড় খবর এনেছে। এবার থেকে আইআরসিটিসি (IRCTC)–তে ট্রেনের টিকিট কাটতে গেলে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। আধার কার্ড না থাকলে আপনি আর রেলে যাতায়াত করতে পারবেন না। আধার ছাড়া যাত্রীরা সমস্যায় পড়তে পারেন, বিশেষত বুকিং খোলার প্রথম ১৫ মিনিটে। আগামী ১ অক্টোবর ২০২৫ থেকে এই নিয়ম কার্যকর হবে। সেন্টার ফর রেলওয়ে ইনফরমেশন সিস্টেমস (CRIS) ও আইআরসিটিসি একসঙ্গে মিলে নতুন সিস্টেম আপডেট করছে যাতে আধার ভিত্তিক অথেন্টিকেশন নিশ্চিত করা যায়। এবার রেলের টিকিট বুকিং করতে গেলে আগে থেকে আঁধার অথেন্টিকেশন করে নিতে হবে।

কেন আসছে এই নতুন নিয়ম?

রেলের আধিকারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন অনলাইনে কোটি কোটি টিকিট বুক হয়। অনেক সময় দেখা যায় টিকিট খোলার প্রথম কয়েক মিনিটেই সেগুলি এজেন্ট বা সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্লক হয়ে যায়। এর ফলে সাধারণ মানুষদের ভোগান্তি হয়। অনেক সময় দেখা যায় সাধারণ যাত্রীরা রেলের টিকিট কাটতে পারে না। ফলে সাধারণ যাত্রীরা তখন টিকিট পাওয়ার সুযোগ হারান। এ সমস্যা কমাতে আধার অথেন্টিকেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে টিকিট বুকিং প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আসবে এবং সাধারণ যাত্রীদের জন্য টিকিট পাওয়া সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কিভাবে কাজ করবে এই নিয়ম?

১ অক্টোবর থেকে টিকিট বুকিং শুরু হওয়ার পর প্রথম ১৫ মিনিটে কেবল আধার অথেন্টিকেশন সম্পন্ন করা যাত্রীরাই টিকিট বুক করতে পারবেন। অর্থাৎ, এই সময়ে টিকিট কাটতে গেলে আইআরসিটিসি ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপে লগইন করার পর আধার যাচাই করতে হবে। যাচাই সফল হলে বুকিং সম্পন্ন করা যাবে। আধার অথেন্টিকেশন না করতে পারলে আর বুকিং করা যাবে না রেলের টিকিট।

তবে এক্ষেত্রে ১৫ মিনিট পার হয়ে গেলে সব যাত্রীরাই টিকিট কাটতে পারবেন, এমনকি আধার না থাকলেও।

কোন ধরণের যাত্রীদের জন্য আধার বাধ্যতামূলক?

  • শুধুমাত্র টিকিট বুকিং শুরুর প্রথম ১৫ মিনিটে সকল যাত্রীর জন্য আধার বাধ্যতামূলক।
  • তৎকাল বুকিং বা স্পেশাল ট্রেনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
  • যারা আধার অথেন্টিকেশন করবেন না, তাদের জন্য বুকিং উইন্ডো ১৫ মিনিট পরে খুলবে।

নতুন নিয়মে যাত্রীদের সমস্যাই বাড়বে?

নতুন নির্দেশিকা প্রকাশের পর অনেক যাত্রী চিন্তায় পড়েছেন। কারণ এখনো অনেকের কাছে আধার কার্ড নেই অথবা অনলাইন অথেন্টিকেশনে সমস্যা হয়। অনেকের আধার কার্ডের সঙ্গে মোবাইল নাম্বার লিঙ্ক করা নেই। গ্রামাঞ্চলের যাত্রীদের অনেক সময় নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে আধার অথেন্টিকেশন ব্যর্থ হতে পারে। ফলে বুকিংয়ের প্রথম দিকে তারা অসুবিধায় পড়তে পারেন। তবে পরবর্তীকালে এই সমস্যার সমাধান করা হবে।

তবে রেলের দাবি, এই নিয়ম শুধুমাত্র প্রথম ১৫ মিনিট কার্যকর থাকবে। এরপর থেকে যেকোনো যাত্রী আগের মতোই টিকিট কাটতে পারবেন। তাই যাত্রীদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।

রেলের বক্তব্য

রেল কর্তৃপক্ষের মতে, এই পদক্ষেপ যাত্রী স্বার্থে নেওয়া হয়েছে। আধার অথেন্টিকেশন বাধ্যতামূলক করার ফলে—

  • নকল অ্যাকাউন্ট কমবে।
  • বেআইনি সফটওয়্যারের ব্যবহার রোধ হবে এবং অবৈধভাবে আর কেউ টিকিট বুকিং করতে পারবেনা।
  • টিকিট কালোবাজারি অনেকাংশে বন্ধ হবে। এর ফলে সাধারণ মানুষেরাও নিজের ইচ্ছামতার ক্রিকেট বুকিং করতে পারবে।
  • সাধারণ যাত্রীরা টিকিট পাওয়ার ন্যায্য সুযোগ পাবেন।

যাত্রীদের প্রতিক্রিয়া

নতুন নিয়ম ঘোষণার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকের মতে এই পদক্ষেপ ভালো আবার অনেকে বলছে এই সংক্ষেপে অনেকেই সমস্যায় পড়বে। কেউ বলছেন এটি ভালো পদক্ষেপ, কারণ এর ফলে টিকিট ব্লকিং কমবে। আবার কেউ বলছেন, গ্রামীণ যাত্রীদের জন্য এটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে যারা আধার কার্ড ব্যবহার করতে অভ্যস্ত নন বা অনলাইন সিস্টেমে সমস্যায় পড়েন।

আসল সমস্যা কোথায়?

ভারতীয় রেলের প্রধান সমস্যাগুলির একটি হলো টিকিট ব্ল্যাকিং। এর ফলে এজেন্টরা আর অবৈধভাবে টিকিট বুকিং করে টাকা কামাতে পারবেনা। অনেক এজেন্ট বেআইনি সফটওয়্যার ব্যবহার করে সেকেন্ডের মধ্যে বিপুল সংখ্যক টিকিট বুক করে ফেলে। সাধারণ যাত্রী তখন দীর্ঘ লাইনে থেকেও টিকিট পান না। আধার অথেন্টিকেশন এই সমস্যার সমাধান করবে বলেই রেলের বিশ্বাস।

কিন্তু অন্যদিকে, আধার অথেন্টিকেশনের সময় যদি সার্ভার ডাউন থাকে বা OTP না আসে, তাহলে সাধারণ যাত্রীই বিপাকে পড়বেন। তাই অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, রেলকে প্রথমে প্রযুক্তিগত দিক থেকে আরও শক্তিশালী হতে হবে।

বিষয়আগের নিয়মনতুন নিয়ম (১ অক্টোবর ২০২৫ থেকে)
আধার কার্ডটিকিট কাটতে বাধ্যতামূলক নয়বুকিং খোলার প্রথম ১৫ মিনিটে বাধ্যতামূলক
বুকিং সময়সবার জন্য একসাথেআধার যাচাইকারীদের জন্য আগে, অন্যরা ১৫ মিনিট পরে
প্রভাবনকল বুকিং ও এজেন্টদের দৌরাত্ম্যটিকিট ব্লকিং কমবে, সাধারণ যাত্রী টিকিট পাবেন সহজে
তৎকাল/স্পেশাল ট্রেনআগের মতো বুকিং সম্ভবপ্রথম ১৫ মিনিটে আধার বাধ্যতামূলক

ভারতীয় রেলের নতুন নির্দেশিকা যাত্রীদের মধ্যে আলোড়ন ফেলেছে। একদিকে সাধারণ যাত্রীদের জন্য টিকিট পাওয়া সহজ করার উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলেও, অন্যদিকে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে অনেকের অসুবিধাও হতে পারে। তবুও রেলের আশা, আধার অথেন্টিকেশন চালু হলে টিকিট বুকিং প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা আসবে এবং কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য অনেকাংশে কমবে। এর ফলে সাধারণ মানুষেরা তাদের ইচ্ছা মতো টিকিট বুকিং করতে পারবেন।