দীর্ঘদিন ধরে ভারতের তথা পশ্চিমবঙ্গের চলছে আধার কার্ড এবং ভোটার কার্ড নিয়ে আলোচনা। কিছু দিনের মধ্যে এই রাজ্যে ঘটে যাচ্ছে ভোটার তালিকা সংশোধন যেখানে আধার কার্ড অথবা ভোটার কার্ড গ্রহণযোগ্যতা হবে না। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড ভুয়ো বা জালিয়াতি করার তথ্য সামনে এসেছে। তাই আপনার আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড টি সঠিক কিনা এবং কেউ আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড বানিয়েছে কিনা সে ব্যাপারে চলছে তদন্ত। যদি এমন ধরা পড়ে তাহলে তার দৃষ্টান্তমূলক করা শাস্তি হবে এবং হতে পারে জেল ও জরিমানা।

Fake Voter-Aadhar Card
Fake Voter-Aadhar Card

ভারতের ভোটার তালিকা ও আধার কার্ড — এই দুই পরিচয়পত্র শুধু নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়, বরং সরকারি সমস্ত সুবিধা ও সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগের অন্যতম প্রধান ভিত্তি। কিন্তু সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে এক বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করার অভিযোগে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এমন আরো ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় এবং আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওই এলাকার স্থানীয়দের দাবি, বেল্লাল গাজি নামের ওই ব্যক্তি কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে এসে গ্রামে বসবাস শুরু করেন এবং ভারতীয় নাগরিককে বাবা সাজিয়ে ভোটার ও আধার কার্ড সংগ্রহ করেন। যেটা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং পুরোপুরি ভুয়ো। ঘটনাটি সামনে আসতেই শুধু এলাকায় নয়, রাজ্য রাজনীতিতেও তা বড় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।

কী অভিযোগ উঠেছে?

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ,

  • বেল্লাল গাজি মূলত বাংলাদেশের নাগরিক। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছে।
  • স্থানীয়রা দাবি করেছেন কয়েক বছর আগে সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গের হিঙ্গলগঞ্জে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
  • তিনি স্থানীয় এক ব্যক্তি, আমজেত গাজিকে নিজের বাবা হিসেবে দেখিয়ে সরকারি নথিতে নাম নথিভুক্ত করেন। থেকে একটি অবৈধ প্রক্রিয়া।
  • এর ফলে তিনি সহজেই ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড সংগ্রহ করতে সক্ষম হন।

অভিযোগ অনুযায়ী, নথি তৈরি হওয়ার পর থেকেই বেল্লাল ওই অঞ্চলে দাপটের সঙ্গে ঘোরাফেরা করতেন। এর ফলে তার দাপট দেখে সকলেই ভয় পেতেন। স্থানীয় মানুষজন তাঁর কার্যকলাপে আতঙ্কিত হলেও দীর্ঘদিন কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। তবে সত্য কখনো চাপা থাকে না তাই দীর্ঘদিন পর অবশেষে এই ঘটনার সামনে এসেছে এবং সমগ্র অঞ্চল জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

স্থানীয়দের আতঙ্ক ও প্রতিক্রিয়া

গ্রামের সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, বেল্লাল গাজির বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও ছিল না। কারণ তিনি ছিলেন একজন দাপুটে মানুষ। তিনি স্থানীয় এলাকায় বাড়ি তৈরি করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাঁর ভয়ে কেউ সহজে মুখ খুলতে চাইতেন না, তবে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতে ব্যাপারটি জানাজানি হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি এলাকায় কার্যত একধরনের ‘সন্ত্রাস’ তৈরি করেছে বলে অভিযোগ। এরপরেই এই নিয়ে তদন্ত শুরু হয়।

বেল্লালের স্ত্রীর দাবি

খবরে আরও উঠে এসেছে, বেল্লালের স্ত্রী নিজেকে বাংলাদেশি বলে স্বীকার করেছেন। এছাড়াও তিনি জানিয়েছেন তারা দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে বসবাস করছে যদিও এখনও পর্যন্ত তাঁর নিজের ভোটার কার্ড বা আধার কার্ড তৈরি হয়নি। এরপরেই এটি প্রমাণিত হয়ে যায় যে অনুপ্রবেশকারীরা শুধুমাত্র সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে বসবাস করছে তাই নয় বরং তারা সরকারি নথি জাল করে বা অবৈধভাবে পরিচয় পত্র বানিয়ে নিচ্ছে। যদিও এই নিয়ে রাজনৈতিক মত বিরোধ তৈরি হয়েছে।

আদালতের ভূমিকা ও ভোটার তালিকার সংশোধন

এই প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলার শুনানির সময় আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি জানিয়েছেন, ডিসেম্বর মাস থেকে পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার ‘বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া’ শুরু হতে পারে। এর ফলে যত অবৈধ ভোটার কার্ড রয়েছে এবং যারা মূলত অনুপ্রবেশকারী তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে এছাড়াও ভূতুড়ে ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

শুধু উত্তর ২৪ পরগনা নয়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ভূতুড়ে ভোটারের অভিযোগ মিলছে। অবৈধভাবে ভোটার কার্ড এবং আধার কার্ড বানিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে। ইতিমধ্যে অভিযোগ উঠেছে ডায়মন্ড হারবারে ভুরি ভুরি মৃত ভোটারদের নাম তালিকায় রয়েছে। অনেক জায়গায় দেখা গিয়েছে ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও বাস্তবে সেই ব্যক্তির কোন অস্তিত্বই নেই। এসব ঘটনায় ভোটার তালিকার নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

 FAQ

প্রশ্ন ১: কীভাবে একজন বাংলাদেশি ভোটার/আধার কার্ড তৈরি করতে পারে?
➡ স্থানীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি ও ভুয়ো নথির সাহায্যে তা সম্ভব হয়।

প্রশ্ন ২: সরকার কীভাবে এমন ভুয়ো পরিচয়পত্র চিহ্নিত করে?
➡ ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন, আধার-ভোটার লিঙ্কিং এবং মাইগ্রেশন ডেটা মিলিয়ে দেখা হয়।

প্রশ্ন ৩: যদি কোনও সাধারণ নাগরিক এমন ঘটনা লক্ষ্য করেন, তিনি কী করবেন?
➡ স্থানীয় থানায় অভিযোগ করতে পারেন অথবা জেলা নির্বাচন দপ্তরে লিখিতভাবে জানাতে পারেন।

শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের একটি জায়গায় নয় এমন ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যেকটি জেলায় জেলায় খোঁজ নিলে দেখা যাবে। উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে বাংলাদেশি বেল্লাল গাজির ভুয়ো আধার-ভোটার কার্ড কাণ্ড রাজ্যের ভোটার তালিকা ও পরিচয়পত্রের নিরাপত্তা শুধুমাত্র একটি ঘটনা নয় তবে এমন ঘটনা আরও সামনে আসবে যখন ভোটার তালিকা সংশোধনী সমীক্ষা করা হবে। সীমান্তবর্তী এলাকায় এমন ঘটনা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে যেখানে অনুপ্রবেশ ও নথি জালিয়াতের সমস্যা রয়েছে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে সমগ্র রাজ্য জুড়ে ভোটার তালিকা সংশোধনী সমীক্ষা হবে এবং অবৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হবে। এই সমীক্ষা ভীষণ জরুরী নইলে ভোটের স্বচ্ছতা, জননিরাপত্তা ও প্রশাসনিক সুশাসন—সবই প্রশ্নের মুখে পড়বে।