পশ্চিমবঙ্গের চাকরি প্রার্থী তথা ছাত্রছাত্রীদের জন্য দারুন একটি সুখবর। কেন্দ্র সরকার তথা প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন সমগ্র রাজ্যে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনা থেকে শুরু করে চাকরি-বাকরি সমস্ত দিকে সরকার বাড়তি সুবিধা দেবেন। এর জন্য যারা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে বিশেষ করে জেনারেল ক্যাটাগরির ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে সকলেই বানাতে পারবেন EWS সার্টিফিকেট। পশ্চিমবঙ্গের চাকরিপ্রার্থী এবং উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী সেই সমস্ত নাগরিক যাঁরা আর্থিকভাবে দুর্বল (Economically Weaker Section – EWS), তাঁদের জন্য এটি অবশ্যই একটি বড় খবর! রাজ্য সরকার এবার বড় একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারণ রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি জারি করা একটি নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এখন থেকে EWS সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করা যাবে অনেক সহজভাবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যেই তা পাওয়া যাবে। খুব দ্রুততার সঙ্গে আবেদন করলেই এবং উপযুক্ত হলে EWS সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে কয়েকদিনের মধ্যেই।

রাজ্য সরকারের সরকারের এই সিদ্ধান্ত লক্ষ লক্ষ চাকরিপ্রার্থী ও ছাত্রছাত্রীদের জন্য যেমন স্বস্তির খবর, তেমনি এটি সমাজে অর্থনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কারণ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীরা চাকরির ক্ষেত্রে বা পড়াশুনোর ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পেলে তারাও সমাজের মূল ধারায় যুক্ত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে।

EWS সার্টিফিকেট কী এবং কেন এটি জরুরি?

EWS (Economically Weaker Section) হলো সেই সমস্ত সাধারণ শ্রেণির (General Category) নাগরিক, যাঁরা SC/ST/OBC শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত নন এবং আর্থিকভাবে পিছিয়ে রয়েছেন। বিশেষ করে জেনারেল ক্যাটাগরির ছাত্রছাত্রীরা এতদিন ধরে বাড়তি কোনো সুযোগ সুবিধা পাইনি, তাই এদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার জন্যই এই সার্টিফিকেট। এই শ্রেণির মানুষরা কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সংরক্ষিত সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন যদি তাঁদের কাছে EWS সার্টিফিকেট থাকে। কারণ কেন্দ্র সরকারও ঘোষণা করেছেন সমস্ত ধরনের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ১০% সংরক্ষণ করা থাকবে EWS ক্যাটাগরির প্রার্থীদের জন্য।

যে সমস্ত বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়ঃ

  • সরকারি চাকরিতে অতিরিক্ত ১০% সংরক্ষণ রয়েছে
  • বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন সংরক্ষণ করা হবে
  • বিভিন্ন ধরনের সরকারি স্কলারশিপ ও আর্থিক সহায়তা পাওয়া যাবে

কাদের জন্য এই সার্টিফিকেট?

এই সার্টিফিকেট মূলত তাঁদের জন্য, যাঁরা জেনারেল ক্যাটাগরির আওতায় আসেন কিন্তু আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়েছেন। তাঁদের সহায়তার জন্য EWS শ্রেণির সৃষ্টি। অর্থাৎ এবার থেকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকলেও সরকারিভাবে চাকরি বাকরি থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে। সকলেই এই সার্টিফিকেট বানাতে পারবেন।

EWS সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য যোগ্যতা (Eligibility Criteria):

শর্ত বিস্তারিত
জাতিগত শ্রেণি আবেদনকারী অবশ্যই General Category-র হতে হবে (SC/ST/OBC নয়)।
আয় পরিবারিক বার্ষিক আয় ৮ লক্ষ টাকার কম হতে হবে।
সম্পত্তির সীমা শহরে ১০০০ স্কয়ার ফিটের কম ফ্ল্যাট, ৫ একরের কম কৃষিজ জমি।
সরকারি চাকরি পরিবারের কেউ সরকারি চাকরি না করলে বিশেষ সুবিধা।
বয়স সীমা সাধারণত ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে।

আবেদন পদ্ধতি: অনলাইন ও অফলাইন দুই উপায়েই করুন আবেদন

যারা যারা EWS সার্টিফিকেট বানাতে ইচ্ছুক তারা মূলত অনলাইন এর মাধ্যমে অথবা অফলাইনের মাধ্যমে দুটো পদ্ধতিতে আবেদন করতে পারবেন। যারা আবেদন জানাতে ইচ্ছুক তারা নিচের পদ্ধতি অবলম্বন করে নিজেরাই আবেদন করতে পারবেন। নিচে প্রতিটি পদ্ধতি ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো।

১. অনলাইনে আবেদন করার পদ্ধতি (Online Application Process)

ধাপ ১:

সবার প্রথমে ভিজিট করুন পশ্চিমবঙ্গ অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ দপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটঃ
👉 wb.gov.in অথবা সংশ্লিষ্ট জেলা পোর্টাল ভিজিট করে দেখতে পারেন।

ধাপ ২:

অনগ্র শ্রেণীর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যাওয়ার পরে “Apply for EWS Certificate” অপশন-এ ক্লিক করুন।

ধাপ ৩:

এরপর প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য দিয়ে নির্ভুল ভাবে আবেদনের ফর্ম ফিলআপ করুন (নাম, ঠিকানা, আয়, সম্পত্তির বিবরণ ইত্যাদি)।

ধাপ ৪:

প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট স্ক্যান করে আপলোড করুন।

ধাপ ৫:

আবেদন জমা দিন এবং অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ ডাউনলোড করে রাখুন।

২. অফলাইনে আবেদন করার পদ্ধতি (Offline Application Process)

অফলাইনে আবেদনের প্রথম এই সংশ্লিষ্ট জেলার পঞ্চায়েত অফিসে অথবা ব্লক অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন EWS এর সুবিধা দিচ্ছে কিনা। যদি আপনাদের ব্লক থেকে এই সুবিধা দেওয়া হয় তাহলে নিচের পদ্ধতি অবলম্বন করে আবেদন জানাতে পারেন-

ধাপ ১:

নিকটবর্তী ব্লক অফিস / BDO / SDO অফিস / পৌরসভা / পঞ্চায়েতে গিয়ে আবেদন ফর্ম সংগ্রহ করুন।

ধাপ ২:

ফর্মটি সঠিকভাবে পূরণ করে নিচের দেওয়া ডকুমেন্টস আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করুন।

ধাপ ৩:

আবেদন জমা দিন এবং রিসিভিং কপি সংগ্রহ করুন।

EWS সার্টিফিকেটের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস (Required Documents):

ডকুমেন্ট বিবরণ
পরিচয়পত্র আধার কার্ড / ভোটার আইডি
ঠিকানার প্রমাণ রেশন কার্ড / বিদ্যুৎ বিল / পানির বিল
আয় সার্টিফিকেট ব্লক অফিস বা পঞ্চায়েত থেকে জারি করা ইনকাম সার্টিফিকেট
জমির কাগজ জমির পরিমাণ, রেকর্ড অব রাইটস (RoR) ইত্যাদি প্রমাণপত্র
পাসপোর্ট সাইজ ছবি সদ্য তোলা রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি
আবেদনের স্বীকৃতি অনলাইন/অফলাইন স্লিপ

কেন এই নির্দেশিকা গুরুত্বপূর্ণ?

রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে আর্থিকভাবে দুর্বল হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী ও বেকার যুবক-যুবতী যাঁরা পূর্বে সরকারি সংরক্ষণের বাইরে ছিলেন, তাঁরা এখন বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হবেন। এর ফলে সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে পারবেন খুব সহজেই। এছাড়াও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে খুব দ্রুত এই সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে তাই যারা আবেদন করবেন তারা খুব সহজেই এবং খুব তাড়াতাড়ি সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে যাবেন।

সতর্কতা: অবৈধ আবেদনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে

সরকার বারবার জানিয়েছে, এই সুবিধা শুধুমাত্র প্রকৃত দরিদ্রদের জন্য। তবে এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে হবে যেন কোন ভুয়া আয় শংসাপত্র বা জাল তথ্য দিয়ে আবেদন না করেন, যদি কেউ এমন করে থাকেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসন ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্তরে স্ক্রুটিনি প্রক্রিয়া চালু করেছে।

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছেন, সেখানে EWS সার্টিফিকেট একটি আশার আলো। এটা শুধুমাত্র রাজ্যস্তরে নয় কেন্দ্রস্থলে সমস্ত চাকরির ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়। এটি কেবল চাকরি নয়, শিক্ষা ও জীবনের বহু ক্ষেত্রেই দরিদ্র মানুষের সম্ভাবনার দরজা খুলে দেয়। এই সার্টিফিকেট দরিদ্র মানুষদের একটি আশার আলো।

আপনিও যদি এই ক্যাটাগরির আওতায় পড়েন, তাহলে দেরি না করে আজই EWS সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করুন এবং সরকারি সুবিধা গ্রহণের পথে এগিয়ে যান।