বর্তমানে ভারতে পাসপোর্ট এর গুরুত্ব অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। পাসপোর্ট থাকলে আপনার আর কোন কাগজ প্রয়োজন নেই, শুধুমাত্র এই পাসপোর্ট দিয়েই আপনি প্রমাণ হয়ে যাবেন ভারতীয় নাগরিক। ছোট থেকে বড় সকলেই পাসপোর্ট বানিয়ে নিতে পারবেন খুব সহজে এবং ঘরে বসে। বর্তমান পাসপোর্ট বানানো আর আগের মত কঠিন বিষয় নয়। খুব সহজেই ঘরে বসে আপনি পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন।

E-Passport
E-Passport

বর্তমান দিনের পর দিন ভারত ডিজিটাল হচ্ছে। আর এই ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যুগে পাসপোর্ট পরিষেবাতেও এসেছে এক বিরাট পরিবর্তন।  পাসপোর্ট বানানোর জন্য আপনাকে আগের মতন দীর্ঘদিন অপেক্ষা করা বা আগের মতো লম্বা লাইন, কাগজপত্র জমা দেওয়া আর অফিস ঘুরে বেড়ানোর দিন শেষ। এখন থেকে ঘরে বসেই কয়েক ক্লিকের মাধ্যমে আপনি আবেদন করতে পারবেন ই-পাসপোর্টের (E-Passport) জন্য। শুধু তাই নয়, আপনি ঘরে বসে দেখে নিতে পারবেন আপনার পাসপোর্ট এর যাবতীয় তথ্য, এমনকি আবেদন জমা দেওয়ার পর অনলাইনে ট্র্যাক করেও দেখতে পারবেন আপনার পাসপোর্টের অগ্রগতি।

ই-পাসপোর্ট কী?

বর্তমান ডিজিটাল যুগ তাই ডিজিটাল সবকিছু হচ্ছে খুব সহজেই। এবার ই-পাসপোর্ট হলো এমন একটি আধুনিক পাসপোর্ট যাতে এম্বেড করা থাকে ইলেকট্রনিক চিপ। এই ই পাসপোর্টে আপনার সমস্ত কাজ হয়ে যাবে এবং পাসপোর্টে যে ইলেকট্রনিক চিপস এম্বেড করা থাকে এই চিপে সংরক্ষিত থাকে আবেদনকারীর নাম, জন্মতারিখ, ফটো, আঙুলের ছাপসহ অন্যান্য বায়োমেট্রিক তথ্য। ফলে এটি আগের চেয়ে অনেক বেশি সুরক্ষিত এবং জালিয়াতি প্রতিরোধে কার্যকর। আর সব থেকে বড় সুবিধা হল এর জন্য আপনাকে কোন ঝামেলা করতে হবে না শুধুমাত্র বাড়িতে বসেই হাতে পেয়ে যাবেন এই পাসপোর্ট।

ই-পাসপোর্ট আবেদন করতে কী কী ডকুমেন্টস লাগবে?

এখানে আবেদন করতে হলে আপনার প্রয়োজনীয় বেশ কিছু ডকুমেন্টস দরকার। আবেদন শুরু করার আগে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুছিয়ে রাখাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। এখানে আবেদন করতে হলে আপনার যে সমস্ত ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন, এর মধ্যে থাকে—

  • পরিচয়পত্র: এখানে আবেদন জানানোর জন্য আপনার ব্যক্তিগত পরিচয় পত্র হিসেবে প্রয়োজন আধার কার্ড, ভোটার আইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি।
  • ঠিকানার প্রমাণপত্র: আপনার স্থায়ী বাসিন্দার প্রমাণ হিসেবে দরকার বিদ্যুৎ/জল বিল, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট বা রেশন কার্ড অথবা যেখানে আপনার স্থায়ী ঠিকানা লেখা থাকে সেরকম একটি ডকুমেন্ট।
  • পুরোনো পাসপোর্ট (যদি থাকে): নবীকরণের জন্য আপনার এই সমস্ত ডকুমেন্ট অবশ্যই প্রয়োজন।

এখানে আবেদন করার আগে আপনাকে সমস্ত ডকুমেন্টসগুলো রেডি করে রাখতে হবে, আগে থেকে সব কাগজপত্র প্রস্তুত থাকলে আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হবে।

আবেদন ফি কত?

ই-পাসপোর্টের ফি সবার জন্য এক নয়। ই পাসপোর্ট বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এবং এর জন্য বয়স, পাসপোর্টের ধরন (সাধারণ বা তটকাল), এবং মেয়াদ অনুযায়ী ফির পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে। আপনারা যখন অনলাইনে আবেদন করতে যাবেন তখনই আপনারা এক একটি পাসপোর্ট এর জন্য আলাদা আলাদা আবেদন ফি দেখতে পাবেন। তাই আবেদন করার আগে সরকারিভাবে সর্বশেষ ফি কত নির্ধারিত আছে তা অবশ্যই জেনে নিন। এতে শেষ মুহূর্তে কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না।

সঠিক ধরনের পাসপোর্ট বেছে নিন

সব আবেদন একরকম নয়। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পাসপোর্টের ধরন বেছে নেওয়া জরুরি। এখানে বিভিন্ন ধরনের পাসপোর্ট পাওয়া যায় আপনার চাহিদা অনুযায়ী এবং ইচ্ছে অনুযায়ী আপনি যেকোনো একটি পাসপোর্ট বানিয়ে নিতে পারেন।

  • সাধারণ পাসপোর্ট – যারা সাধারণ ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করবেন। যারা বিভিন্ন স্থানে ট্রাভেল অথবা ভ্রমণের জন্য বা কোন প্রয়োজনে একই স্থান থেকে অন্য স্থানে যান তারা এই পাসপোর্ট বানাতে পারেন। এছাড়াও এটি ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য নাগরিক পত্র তাই আপনি এটি বানাতে পারেন।
  • তটকাল পাসপোর্ট – যাদের জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত পাসপোর্ট দরকার। বিশেষ করে যাদের ডাক্তারি প্রয়োজন বা ইমারজেন্সি অ্যাড্রেস থেকে অন্য দেশে যেতে হবে তারা এই পাসপোর্ট বানিয়ে নিতে পারেন।
  • অফিশিয়াল/ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট – সরকারি কাজে ব্যবহৃত। আপনি যদি সরকারি কোন কাজকর্ম করতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এবং এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করেন তাহলে আপনার এই পাসপোর্ট বানাতে হবে।

ভুল ধরন বেছে নিলে ভবিষ্যতে অপ্রয়োজনীয় জটিলতা তৈরি হতে পারে।

অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং

আবেদন জমা দেওয়ার পর আপনাকে নির্দিষ্ট দিনে পাসপোর্ট অফিসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার ইচ্ছেমত যে কোনদিন আপনার সুবিধা অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন।

  • সময় বেছে নেওয়ার সময় আপনার ব্যক্তিগত সূচি মাথায় রাখুন।
  • আগে থেকে বুক করলে আপনার সুবিধামতো তারিখ ও সময় পাওয়া সহজ হবে। ফলে আপনি আপনার সুবিধামতো তথ্য নিয়ে হাজির হতে পারবেন।
  • অফিসে যাওয়ার সময় সব কাগজপত্র সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে মনে রাখবেন আপনার সমস্ত অরিজিনাল ডকুমেন্টগুলো নিয়ে হাজির হবেন।

আবেদন স্ট্যাটাস চেক

আবেদন জমা হয়ে গেলে অনলাইনে তার অগ্রগতি সহজেই দেখা যায়। আপনার আবেদন পত্রটির কি খবর এবং কতদূর এগুলো সে ব্যাপারে আপনি বিস্তারিত তথ্য স্ট্যাটাস ট্রাক এর মাধ্যমে জেনে নিতে পারবেন।

  • এক্ষেত্রে আপনাকে সরকারিভাবে দেওয়া ট্র্যাকিং টুল বা পোর্টালে লগইন করুন।
  • আবেদন করার পরে আপনাকে একটি নাম্বার দেবে সেই আপনার ফাইল নম্বর দিয়ে চেক করুন।
  • যদি অতিরিক্ত কোনো কাগজপত্র জমা দিতে হয়, সিস্টেম থেকেই আপডেট পাবেন। এর ফলে আর আপনার অতিরিক্ত ঝামেলা হবে না বাড়িতে বসেই সমস্ত কিছু সম্পন্ন হয়ে যাবে।

এতে আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত হয় এবং দেরি হওয়ার সম্ভাবনা কমে। তাই যাদের দ্রুত পাসপোর্ট প্রয়োজন তারা আর দেরি না করে বাড়িতে বসেই আবেদন করে দিতে পারেন।

ই-পাসপোর্ট কেবল একটি আধুনিক ভ্রমণ নথি নয়, বরং নিরাপদ ও ডিজিটাল দুনিয়ায় এক নতুন পদক্ষেপ। বর্তমান দিনের সমস্ত কিছু ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে তাই এই ই পাসপোর্ট সমস্ত ক্ষেত্রে কার্যকরী হবে এবং খুব দ্রুত আপনি এটি বানাতে পারবেন। কয়েকটি সাধারণ নিয়ম মেনে চললেই আপনি ঘরে বসেই সহজে আবেদন করতে পারবেন। আর হাতে পাবেন নিরাপদ, দ্রুত এবং বিশ্বমানের নতুন পাসপোর্ট।