বর্তমানে ডিজিটালাইজেশনের যুগে মানুষ ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা বিশেষ প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা সরকারি কাজকর্ম করে না অর্থাৎ অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজের সঙ্গে যুক্ত যেমন — দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক কিংবা স্বনির্ভর উদ্যোক্তা — তাঁদের অবসর জীবনে নির্ভরযোগ্য আয়ের উৎস খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অবসর সময়ে এই সমস্ত ব্যক্তিদের পরিস্থিতি অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কেন্দ্র সরকারের নতুন এই যোজনাটি ভবিষ্যতের কথা চিনতে ভাবনা করে ভবিষ্যৎ তাদের আর্থিক সুনিশ্চিত করবে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের অটল পেনশন যোজনা (Atal Pension Yojana – APY) একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প হিসেবে উঠে এসেছে, যার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকবে।

অটল পেনশন যোজনা

অটল পেনশন যোজনা প্রথম চালু হয়েছিল ২০১৫ সালের ৯ মে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির হাত ধরে, যার মূল লক্ষ্য ছিল অসংগঠিত ক্ষেত্রে যে সমস্ত ব্যক্তিরা কাজকর্ম করেন বিশেষ করে শ্রমিক, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষক এদের জন্য জন্য অবসর-পরবর্তী একটি স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করা। 18 বছর বয়স হলেই এই প্রকল্পের আবেদন করার সুযোগ পাওয়া যাবে এবং ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। এরপর আপনি আপনার বয়স অনুযায়ী মাসিক প্রিমিয়াম বেছে নিতে পারেন।

₹210 মাসিক প্রিমিয়ামে ₹5,000 পেনশন কিভাবে সম্ভব?

যত কম বয়সে আপনি এই প্রকল্পের নাম লেখাবেন তত অল্প প্রিমিয়ামে আপনি পরবর্তীকালে বেশি টাকার রিটার্ন পাবেন। যদি কোনো ব্যক্তি ১৮ বছর বয়সে এই স্কিমে যোগ দেন এবং ₹5,000 পেনশন প্রতিমাসে পেতে চান তবে তাঁকে মাসে শুধুমাত্র ₹210 জমা দিতে হবে। এটি আপনার ব্যাংক একাউন্ট থেকে প্রিমিয়াম হিসাবে অটো-ডেবিট পদ্ধতিতে কাটা হবে, এর ফলে প্রিমিয়াম দেওয়ার ঝামেলা নেই।

বয়সভিত্তিক মাসিক প্রিমিয়ামের তালিকা (₹5,000 পেনশনের জন্য)

আপনি যদি প্রতি মাসে 5000 টাকা পেনশন পেতে চান তাহলে আপনাকে নিচের তালিকা অনুযায়ী এবং বয়স অনুযায়ী টাকা জমা করতে হবে-

বয়স (যোগদানের সময়)মাসিক প্রিমিয়াম
১৮ বছর₹210
২৫ বছর₹376
৩০ বছর₹577
৩৫ বছর₹902
৪০ বছর₹1,454

স্কিমের প্রধান সুবিধা

  1. অল্প প্রিমিয়াম জমা করে আপনি ভবিষ্যতের জন্য সুরক্ষিত থাকতে পারেন এবং প্রতি মাসে মাসে টাকা পেয়ে যাবেন।
  2. Section 80CCD(1) অনুসারে আয়কর ছাড় পাওয়া যাবে।
  3. একবার এই প্রকল্পের নাম লেখালে আপনার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত থাকবে এবং ৬০ বছর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নির্বাচিত পেনশন পাবেন।
  4. পেনশনধারীর মৃত্যু হলে তার স্ত্রী পেনশন পাবেন; স্ত্রী মৃত্যুবরণ করলে মনোনীত ব্যক্তিকে বা তাদের সন্তানকে জমাকৃত টাকা দেওয়া হবে।

কিভাবে আবেদন করবেন?

  1. নিকটস্থ ব্যাংক বা পোস্ট অফিসে যান অথবা
    যেকোনো ন্যাশনালাইজড ব্যাংক বা পোস্ট অফিসে এই স্কিম পাওয়া যায় সেখানে গিয়ে যোগাযোগ করতে হবে।
  2. APY ফর্ম পূরণ করুন আবেদনপত্র সংগ্রহ করার পরে নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, পেনশন অপশন, মনোনীত ব্যক্তির নাম লিখুন এবং সমস্ত তথ্য সঠিক স্থানে পূরণ করে আবেদন পত্রটি নির্ভুলভাবে ফিলাপ করুন।
  3. আপনি যে একাউন্ট থেকে প্রিমিয়াম কাটাতে চান সেই প্রিমিয়াম কেটে নেওয়ার জন্য সেভিংস অ্যাকাউন্ট যুক্ত করতে হবে।
  4. আধার নাম্বার এবং মোবাইল নাম্বার দিতে হবে এবং আধারের সঙ্গে মোবাইল লিংক থাকলে ভালো হয়। যেটি OTP ও ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার জন্য জরুরি।
  5. এরপর আপনার সেটিং অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট তারিখে ব্যাংক প্রিমিয়াম কেটে নেবে এর জন্য অটো ডেবিট চালু করতে হবে।

অনেক সাধারণ মানুষ বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের ও শহরতলির মানুষ এই স্কিমে যুক্ত হয়ে সন্তুষ্ট। একদিকে প্রিমিয়াম কম, অন্যদিকে সরকারি গ্যারান্টি — তাই বিশেষ করে দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয়।

অর্থাৎ আপনি যদি এখানে ₹210 মাসিক প্রিমিয়ামে আজীবন ₹5,000 পেনশন — এমন সুযোগ সচরাচর মেলে না। এটি কেন্দ্র সরকারের একটি প্রকল্প টাইম সকলের জন্য সুরক্ষিত। এটি কেবল একটি আর্থিক পরিকল্পনা নয়, বরং একটি সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল, যা আপনার এবং আপনার পরিবারের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষিত রাখবে। অতএব দেরি না করে নিকটস্থ ব্যাংক বা পোস্ট অফিসে গিয়ে অটল পেনশন যোজনায় যুক্ত হন এবং নিশ্চিন্ত অবসর জীবনের পথে প্রথম পদক্ষেপ নিন।