ভারত এক কৃষিনির্ভর দেশ, এখানকার অধিকাংশ মানুষের মূল জীবিকা কৃষিকার। ভারত হলো পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা জনবহুল দেশ এবং দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে যুক্ত। শিল্প-বাণিজ্য দিক দিয়ে ভারত যতই এগিয়ে যাক, গ্রামীন এলাকায় অধিকাংশ মানুষের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো কৃষিকাজ। তাই কৃষকদের জন্য কেন্দ্র সরকার বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন প্রকল্প এনেছেন। যেখানে সরাসরি কৃষকদের ব্যাংক একাউন্টে দেওয়া হচ্ছে টাকা। আপনি যদি একজন ভারতীয় বাসিন্দা হয়ে থাকেন তাহলেও আপনিও সরাসরি এই সমস্ত প্রকল্পে আবেদন করে টাকা পেয়ে যেতে পারেন। বিশেষ করে বর্তমান দিনে জলবায়ুর পরিবর্তন, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, বাজারে পণ্যের সঠিক দাম না পাওয়া ও বিভিন্ন অন্যান্য সমস্যার জন্য অনেক সময় কৃষকেরা তাদের ফসলের সঠিক দাম পান না এর ফলে কৃষকেরা অনেক সমস্যায় পড়েন এবং এজন্যই কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে কৃষকদের বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে।
কৃষকদের জন্য কেন্দ্র সরকার বিভিন্ন ধরনের জনকল্যাণমূলক প্রকল্প নিয়ে এসেছেন। এর ফলে সরাসরি কৃষকেরা উপকৃত হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকার বিগত কয়েক বছরে চালু করেছে একাধিক কৃষক কল্যাণ প্রকল্প, যার মাধ্যমে সরাসরি অর্থ সহায়তা এবং বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি মূলক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন কৃষকেরা। আপনাদের জন্য আজ নিয়ে আসা হয়েছে এরকম পাঁচটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প যার মাধ্যমে সরাসরি কৃষকেরা আর্থিক সহায়তা পেয়ে যাবেন।
১. প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান নিধি (PM-Kisan)
এই প্রকল্পটি কেন্দ্র সরকার প্রথম চালু করেছিলেন ২০১৮ সালে এবং এরপর থেকে এই প্রকল্প ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের একাউন্টে প্রতি বছর বেশ কয়েকটি কিস্তির মাধ্যমে সরাসরি টাকা চাচ্ছেন। এখানে প্রতি বছর ₹৬,০০০ টাকা করে ব্যাংক একাউন্টে দেওয়া হয়, যেটি কৃষকদের বছরে তিন কিস্তিতে (₹২,০০০ করে) সরাসরি কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয় Direct Benefit Transfer (DBT) পদ্ধতিতে।
এই টাকা কৃষকরা বীজ, সার, যন্ত্রপাতি কেনা কিংবা চাষের অন্যান্য খরচ মেটাতে ব্যবহার করতে পারেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকেরা বিভিন্নভাবে উপকৃত হচ্ছেন।
মূল সুবিধা
- প্রতিবছরে ₹৬,০০০ আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে
- প্রতিবছর এখানে তিন কিস্তিতে অর্থপ্রদান করা হচ্ছে
- সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়
- এই প্রকল্পের মাধ্যমে সমগ্র দেশের প্রায় ১১ কোটি কৃষক উপকৃত হচ্ছেন
২. কৃষি উড়ান যোজনা
কৃষি পণ্য একখান থেকে অন্য স্থানের সরবরাহ করার জন্য এবং কৃষকদের মর্যাদাম দেওয়ার জন্য ১৫০০ টাকা চালু করেছেন এই প্রকল্প। এই প্রকল্পটি চালু করা হয়েছিল ২০২০ সালে। এর মাধ্যমে কৃষকরা খুব সহজে এবং খুব দ্রুত ফল, সবজি, ফুল, মাছ, দুধ প্রভৃতি পণ্য দেশের বড় শহরের বাজারে নিরাপদে পাঠাতে পারেন। বর্তমানে দেশের ৫৮টি বিমানবন্দর থেকে এই পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে কৃষকেরা তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পাহাড়ি অঞ্চল ও প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার কৃষকেরা এতে উপকৃত হচ্ছেন, কারণ তাদের পণ্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কমে এবং ভালো দাম পাওয়া যায়। এছাড়াও দূর থেকে পণ্য রয়েছে যেগুলো মূলত পাহাড়ি অঞ্চলের চাষ করা হয় সেগুলো খুব দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে অন্য স্থানে ফলে কৃষি পণ্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কমে যাচ্ছে।
মূল সুবিধা
- কৃষিপণ্যের দ্রুত পরিবহন
- ৫৮টি বিমানবন্দর থেকে পরিষেবা
- দাম বাড়ার সুযোগ
- নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস
৩. প্রধানমন্ত্রী কৃষক মানধন যোজনা
এটি মূলত একটি পেনশন স্কিম, যতই কৃষকদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং বার্ধক্যে যাতে তাদের কোন সমস্যা না হয় সেই উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছে। ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী কৃষকরা মাসে ₹৫৫ থেকে ₹২০০ পর্যন্ত জমা দিয়ে এই স্কিমে যুক্ত হতে পারেন। এই স্ক্রিনে যুক্ত হওয়ার পরে বার্ধক্য সময়ে কৃষকদের সরাসরি আর্থিক সহায়তা করা হয় কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে। কেন্দ্র সরকার এখানে সমপরিমাণ অর্থ জমা রেখে পরবর্তী কালের সহ আরো বেশি টাকা কৃষকদের একাউন্টে পাঠান। এই প্রকল্পের যুক্ত হওয়ার পরে ৬০ বছর পূর্ণ হলে কৃষক প্রতি মাসে ₹৩,০০০ পেনশন পান, যা তার দৈনন্দিন খরচ মেটাতে সহায়ক হয়।
মূল সুবিধা
- প্রতি মাসে ₹৩,০০০ পেনশন দেওয়া হয়
- ১৮–৪০ বছর বয়স হলে এই প্রকল্পে আবেদন জানাতে পারবেন
- বার্ধক্যে স্থিতিশীল আয়ের উৎস
৪. প্রধানমন্ত্রী কৃষি সেচ যোজনা
যে সমস্ত এলাকা শুষ্ক এবং বর্ষাকালে জলের সমস্যা রয়েছে সেখানে এই প্রকল্পটি বর্ষাকালই একমাত্র জলসূত্র। এই প্রকল্পটি কেন্দ্র সরকার কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়াতে ২০১৫ সালে চালু হয় যেটি প্রধানমন্ত্রী কৃষি সেচ যোজনা নামে পরিচিত। এই প্রকল্পের আওতায় ড্রিপ ইরিগেশন, স্প্রিংকলার সেচ, খাল সংস্কার, জল সংরক্ষণ ইত্যাদি সুবিধা দেওয়া হয়।
এর ফলে সেচের কার্যকারিতা বাড়ে, জলের অপচয় কমে এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
মূল সুবিধা
- আধুনিক সেচ ব্যবস্থা
- জল সংরক্ষণ উদ্যোগ
- শুষ্ক অঞ্চলের জন্য বিশেষ কার্যকর
- উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি
৫. প্রধানমন্ত্রী ধনধান্য কৃষি যোজনা
এই প্রকল্পটি সর্বাপেক্ষা নতুন প্রকল্প এবং ২০২৫ সালের ১৬ জুলাই চালু হওয়া এই নতুন প্রকল্প দেশের ১০০টি পিছিয়ে থাকা কৃষি জেলার উন্নয়নকে লক্ষ্য করে কেন্দ্র সরকারের এই প্রকল্পটি এনেছেন। এর আওতায় কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা যেমন আধুনিক বীজ, প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ, পণ্য সংরক্ষণ ও বিপণনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
এটি মূলত কৃষি অবকাঠামো উন্নয়ন ও আয় বৃদ্ধির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ।
মূল সুবিধা
- প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ
- আধুনিক বীজ সরবরাহ
- সংরক্ষণ ও বিপণন সুবিধা
- পিছিয়ে থাকা জেলার উন্নয়ন
৫টি প্রধান কৃষক কল্যাণ প্রকল্প
প্রকল্পের নাম | অর্থ সহায়তা/সুবিধা | লক্ষ্য গোষ্ঠী | বিশেষ বৈশিষ্ট্য |
---|---|---|---|
প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান নিধি | বছরে ₹৬,০০০ | ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক | ৩ কিস্তিতে সরাসরি DBT মাধ্যমে অর্থপ্রদান |
কৃষি উড়ান যোজনা | পণ্য পরিবহন সুবিধা | পাহাড়ি, উত্তর-পূর্ব, গ্রামীণ কৃষক | ৫৮টি বিমানবন্দর থেকে কৃষিপণ্য পরিবহন |
প্রধানমন্ত্রী কৃষক মানধন যোজনা | মাসে ₹৩,০০০ পেনশন | ১৮–৪০ বছর বয়সী কৃষক | সরকার ও কৃষক সমান অবদান রাখেন |
প্রধানমন্ত্রী কৃষি সেচ যোজনা | সেচ অবকাঠামো উন্নয়ন | শুষ্ক ও বর্ষা-নির্ভর অঞ্চল | ড্রিপ ইরিগেশন, জল সংরক্ষণ, খাল সংস্কার |
প্রধানমন্ত্রী ধনধান্য কৃষি যোজনা | প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সুবিধা | ১০০টি পিছিয়ে থাকা কৃষি জেলা | আধুনিক বীজ, সংরক্ষণ ও বিপণন সহায়তা |
ভারতের কৃষকদের উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। যেহেতু ভারত কৃষি নির্বাচন কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পগুলো শুধু অর্থ সহায়তা দিচ্ছে না, বরং কৃষিকে আরও লাভজনক, আধুনিক ও টেকসই করে তুলছে। যদি আপনি কৃষক হন বা কৃষির সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তবে এই স্কিমগুলির বিস্তারিত জেনে আবেদন করা আপনার জন্য লাভজনক হতে পারে।

My name is Bongo Sambad, and I have been involved in content writing for the past four years. I provide various types of informative content for users.