আর ভয় নেই। এবার সকলেই পাবেন ভারতের নাগরিকত্ব। এতদিন ধরে ভারতে সাধারণ নাগরিক দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (Citizenship Amendment Act – CAA) নিয়ে ফের বড় ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে আর কারো নাগরিকত্ব যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অনেকেই রয়েছেন যাদের কাছে ডকুমেন্টস নেই বা অনেকেই বাংলাদেশ বা অন্যান্য কোন দেশ থেকে ভারতবর্ষে এসে বসবাস করছেন। অবশেষে সকলেই পাবেন ভারতের নাগরিক আর ভয় নেই।

আগে যেখানে শর্ত ছিল যে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে আসা শরণার্থীরা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন, এবার সেই সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এর ফলে যারা দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন তাদের জন্য নতুন আইন আনা হলো। ফলে সকালেই পেয়ে যাবেন নাগরিকত্ব।
এর ফলে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ, যারা ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁদের জন্য নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ অনেকটাই সহজ হলো। এতদিন ধরে যারা দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন এবং অনেকেই ভাবছিলেন তার নাগরিকত্ব পাবেন কিনা বা তাদের অন্য কোন দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে কিনা অবশেষে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর মিলে গেল এবং সকলেই এবার নাগরিকত্ব পাবেন।
পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই থাকতে পারবেন শরণার্থীরা
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যাঁরা ২০২৪ সালের শেষ দিন পর্যন্ত ভারতে এসেছেন এবং যাঁদের কাছে বৈধ কাগজপত্র যেমন পাসপোর্ট, ভিসা বা অন্য নথি নেই—তাঁদেরও নাগরিকত্বের আবেদন গ্রহণ করা হবে। অর্থাৎ সকলেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন CAA আওতায়। এমনকি যাঁদের কাছে নথি ছিল কিন্তু এখন মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম কার্যকর হবে।
অর্থাৎ, এখন থেকে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য কোনও বৈধ ডকুমেন্ট দেখানোর প্রয়োজন নেই। তাই আর কোন দুশ্চিন্তা থাকলো না।
কারা এই সুযোগ পাবেন?
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক পরিষ্কার করে জানিয়েছে—
- আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে আসা শরণার্থীরা সকলেই ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন।
- হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ এদেশে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করলে তাদের আর কোন ভয় নেই তারা এবার থেকে ভারতের নাগরিক হয়ে যাবেন।
- যারা ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে প্রবেশ করেছেন এমন কোন ব্যক্তি যাদের মনে দীর্ঘদিন ধরে ভয় ছিল আর তাদের ভয় থাকবে না সকলেই হয়ে যাবেন ভারতের নাগরিক।
- যাঁদের কাছে পাসপোর্ট বা ভিসা নেই, অথবা থাকলেও মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে তাদেরও আর কোন দুশ্চিন্তা নেই তারা সকলেই এবার ভারতের নাগরিক।
এঁরা সরাসরি CAA আইনের আওতায় নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন। আর আবেদন করলেই নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন।
আবেদনকারীর জন্য শর্ত কী কী?
যদিও নথি দেখাতে হবে না, তবুও নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত রাখা হয়েছে—
- আবেদনকারীকে ভারতে অন্তত একটানা ১ বছর বসবাস করতে হবে।
- গত ১৪ বছরের মধ্যে অন্তত ৫ বছর ভারতে বসবাসের প্রমাণ থাকতে হবে।
- অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের মতো সংবেদনশীল সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলির জন্য বিশেষ ছাড় রাখা হয়েছে।
বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের জন্য কড়া নিয়ম
শুধু ছাড় নয়, বেআইনি বিদেশিদের চিহ্নিতকরণ ও ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে যারা অবৈধভাবে এদেশে এসেছেন এবং এ দেশে অবৈধভাবে হয়েছেন তাদের জন্য বেশ কিছু নিয়ম আনা হয়েছে।
- অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারী বিদেশিদের জন্য ডিটেনশন সেন্টার তৈরি করা হবে। যারা নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারবেন না তাদের জন্য এই ব্যবস্থা।
- যাঁরা ধর্মীয় উৎপীড়নের আওতাভুক্ত নন, তাঁদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেন এত বড় পরিবর্তন?
বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিধানসভার নির্বাচনের আগেই এই পরিবর্তন করার কথা বলা হয়েছে।
- বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা শরণার্থীরা, বিশেষ করে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকত্বের দাবি করে আসছিলেন। অবশেষে তারা সকলেই নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন।
- এই সিদ্ধান্তে তাঁদের একটি বড় অংশ সরাসরি উপকৃত হবেন। এবং ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন।
- রাজনৈতিক দিক থেকেও এই পদক্ষেপ বিজেপির জন্য একটি বড় তুরুপের তাস হতে পারে।
২০১৯ থেকে ২০২৫ – সময়সীমার পরিবর্তন
একনজরে দেখে নেওয়া যাক সময়সীমার পরিবর্তনের ইতিহাস—
সাল | নিয়ম/সংশোধনী | কী বলা হয়েছিল |
---|---|---|
২০১৯ | সংসদে CAA পাস | ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আসা শরণার্থীরা নাগরিকত্ব পাবেন |
২০২০-২১ | আইনের কার্যকরকরণ বিলম্বিত | প্রক্রিয়া তৈরি হয়, কিন্তু সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি |
২০২৩ | আইন আংশিকভাবে কার্যকর | কিছু রাজ্যে শুরু হয় আবেদন |
২০২৫ | নতুন সংশোধনী | সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হলো |
সাধারণ মানুষের জীবনে প্রভাব
এই সংশোধনীর ফলে—
- হাজার হাজার শরণার্থী এখন বৈধ নাগরিকত্বের আশা করতে পারছেন। এতদিন ধরে তাদের মনে ভয় ছিল এবার তারা সকলেই নাগরিকত্ব পাবেন।
- অনেকের সন্তান স্কুল-কলেজে ভর্তি হতে পারবে কোনও বাধা ছাড়াই।
- চাকরি, স্বাস্থ্যসেবা ও সরকারি সুবিধা পাওয়ার পথ খুলে যাবে।
- বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে।
FAQ
1. এই সুযোগ কোন কোন সম্প্রদায়ের জন্যও প্রযোজ্য?
শুধুমাত্র হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান ও পার্সি সম্প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য।
2. কবে থেকে আবেদন শুরু হবে?
নতুন নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়েছে। শীঘ্রই অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া চালু হবে।
3. ডকুমেন্ট না থাকলে কীভাবে আবেদন সম্ভব?
আবেদনকারীর নাগরিকত্ব যাচাই হবে তাঁদের বসবাসের সময়কাল ও স্থানীয় প্রমাণের ভিত্তিতে।
4. কতদিনে নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে?
প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে কয়েক মাস থেকে এক বছর সময় লাগতে পারে।
5. এই নিয়ম কি সারা দেশে একইভাবে প্রযোজ্য?
হ্যাঁ, তবে অসম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে কিছু বিশেষ শর্ত রাখা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই নতুন সংশোধনী নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। এর ফলের প্রচুর নাগরিকেরা ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। CAA New Rule 2025 শুধু নাগরিকত্ব আইনকেই নতুন রূপ দিল না, পাশাপাশি হাজার হাজার শরণার্থীর জীবনে নতুন আলো আনল। এর ফলে সকলেই ভীষণভাবে উপকৃত হবেন।
যদিও রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক অব্যাহত, তবুও একথা অস্বীকার করা যাবে না যে— এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের ভারতীয় সমাজ, রাজনীতি এবং মানবিক মূল্যবোধের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে চলেছে।

My name is Bongo Sambad, and I have been involved in content writing for the past four years. I provide various types of informative content for users.