আধার ভারতের প্রত্যেকটি নাগরিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ বায়োমেট্রিক পরিচয় পত্র। ভারতের ছোট থেকে বড় প্রত্যেকটির নাগরিক আধার কার্ডের সঙ্গে পরিচিত। ২০১০ সালে এটি চালু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে আধার হয়ে উঠেছে মানুষের অন্যতম পরিচয়পত্র। যেকোনো সরকারি কাজকর্মে আধার কার্ড প্রয়োজন হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে প্যান কার্ড লিঙ্ক করা, আয়কর রিটার্ন জমা, রেশন কার্ড, মোবাইল সিম, এমনকি স্কুলে ভর্তি— সব ক্ষেত্রেই আধার কার্ড এখন অপরিহার্য। বর্তমানে প্রায় ১৩০ কোটিরও বেশি ভারতীয় নাগরিক আধার কার্ডের আওতায় এসেছেন। তাই বলাই বাহুল্য আধার কার্ড ভারতের জনগণের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ নথি

Aadhar Card new Rules
Aadhar Card new Rules

তবে ভারতে এত বিশাল পরিমাণ মানুষ এই আধার কার্ড ব্যবহার করছেন যার ফলে এর অপব্যবহার প্রচুর পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে। একাধিক আধার কার্ড তৈরি, পুরোনো তথ্য ব্যবহার, ব্যাংক জালিয়াতি, ফ্রড ট্রানজ্যাকশন— সব মিলিয়ে সরকার নতুন নিয়ম আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নতুন নিয়ম আসার ফলে আঁধার দুর্নীতি কমবে এবং সকলেই এর সঠিক ব্যবহার করতে পারবেন। আপনার যদি আধার কার্ড থেকে থাকে আপনাকেও এই নতুন নিয়ম টি জেনে নিতে হবে না হলে পরবর্তীকালে সমস্যায় পড়তে পারেন।

কেন নতুন নিয়ম চালু করা হলো?

গত কয়েক বছরে UIDAI এবং ব্যাংকগুলোর কাছে বিপুল সংখ্যক অভিযোগ এসেছে যে, অনেকেই একাধিক আধার কার্ড ব্যবহার করছেন। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সকলেই। কেউ কেউ ভুয়া নথি দিয়ে আধার বানিয়ে বিভিন্ন সরকারি সুবিধা নিচ্ছেন। এটি একটি বড় দুর্নীতি। এরকম কেউ করলে তার জেল পর্যন্ত হতে পারে। আবার অনেক পুরোনো আধার কার্ডে ছবি অস্পষ্ট, ঠিকানা বা জন্মতারিখ ভুল, এমনকি মৃত ব্যক্তিদের কার্ডও এখনও সক্রিয় রয়েছে। এছাড়াও নিয়মিত আধার কার্ড আপডেট করা প্রয়োজন না হলে পরবর্তীকালে সেটি অকেজ হয়ে যেতে পারে।

এই পরিস্থিতি থেকে বেরোতে সরকার এবার আধার কার্ড সংক্রান্ত কঠোর নতুন নিয়ম চালু করেছে। লক্ষ্য একটাই— প্রতিটি নাগরিকের তথ্য সঠিক রাখা, ফ্রড কমানো এবং আধারকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করা।

নতুন নিয়মের মূল দিকগুলো

১. একাধিক আধার কার্ড রাখা অপরাধ

একজন ভারতীয় নাগরিক কেবলমাত্র একটি আধার কার্ড রাখতে পারবেন এর বেশি আধার কার্ড রাখলে সেটি আইনত অপরাধ। একের বেশি আধার কার্ড থাকলে সেটি জন্য আপনার শাস্তি হতে পারে এবং মোটা অংকের জরিমানাও দিতে হতে পারে সরকারকে এছাড়াও যদি কারো ভুল করে দ্বিতীয় আধার কার্ড হয়ে থাকে তাহলে পুরনো আধার কার্ডটি বাতিল করে দিতে হবে না হলে এটি একটি ক্রাইম।

২. আধার আপডেট বাধ্যতামূলক

  • যাদের আধার কার্ড ১০ বছরের বেশি পুরোনো, তাদের জন্য তথ্য আপডেট এখন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদি কেউ এই তথ্য আপডেট না করে থাকে তাহলেও তার আধার কার্ড বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • ২০১১ বা তার আগে তৈরি আধার কার্ডের ব্যবহারকারীদের ছবি, ঠিকানা ও অন্যান্য তথ্য রিফ্রেশ করতে হবে। অর্থাৎ নতুন করে আবার আপলোড করে সেটি ভেরিফাই করতে হবে।
  • যদি আপডেট না করা হয়, তবে সেই আধার অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। এমনকি পরবর্তীকালে বাতিল হয়ে যেতে পারে।
  • এর ফলে সমস্ত ধরনের সরকারি সুবিধা ও ব্যাংকিং, সাবসিডি, পেনশনসহ নানা পরিষেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

৩. নতুন আধার বানাতে কড়াকড়ি নথি যাচাই

এখনো যদি কারো আধার কার্ড না থাকে বা নতুন করে যদি পরিবারের কোনো সদস্যের আধার কার্ড বানাতে হয় তাহলে বেশ কিছু নথি থাকা প্রয়োজন। নতুন আধার বানাতে এখন থেকে কেবলমাত্র সরকার নির্ধারিত নথি গ্রহণযোগ্য হবে। এর মধ্যে আছে—

  • পাসপোর্ট
  • প্যান কার্ড
  • ভোটার আইডি
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স
  • ব্যাংক পাসবুক
  • বিদ্যুৎ/গ্যাস বিল
  • জন্ম সনদ

বিশেষ করে শিশুদের জন্য জন্ম সনদ দেওয়া বাধ্যতামূলক। আগে কেবল বাবা-মায়ের আধার দিয়েই বাচ্চাদের কার্ড বানানো যেত, কিন্তু অপব্যবহারের কারণে নিয়ম পরিবর্তন হয়েছে। তাই আধার কার্ড বানানোর জন্য অবশ্যই শিশুদের জন্ম সার্টিফিকেট থাকতে হবে।

৪. ফ্রড রোধে বায়োমেট্রিক হালনাগাদ

অনেক পুরনো আধার কার্ডে বায়োমেট্রিক বা চোখের ছাপ ঠিকঠাক বোঝা যায় না তাই এক্ষেত্রে UIDAI নাগরিকদের প্রতি ১০ বছরে বায়োমেট্রিক তথ্য আপডেট করার নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে পরিচয় জালিয়াতি কমবে এবং পরিষেবাগুলো আরও নিরাপদ হবে।

গ্রামীন এলাকায় ও সাধারণ মানুষের উপর প্রভাব

এই নতুন নিয়ম সাধারণ মানুষকে সরাসরি প্রভাবিত করবে। যারা দীর্ঘদিন আধার আপডেট করেননি, তাদের এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়াও দেখা যাবে অনেকের আধার কার্ড দীর্ঘদিন ব্যবহার না করার ফলে বন্ধ হয়ে যাবে এবং সাধারণ মানুষ সেটি বুঝতেও পারবেনা। এছাড়াও আধার আপডেট না থাকলে-

  • প্রবীণ নাগরিকেরা যদি তারা আধার আপডেট না করেন, তবে রেশন বা পেনশন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  • শহরে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ইনকাম ট্যাক্স ফাইলিং, মোবাইল সিম ভেরিফিকেশন— সব ক্ষেত্রেই সমস্যায় পড়তে হবে।
  • নতুন আধার বানাতে গেলে নথিপত্রের যাচাই আরও কঠোর হবে। ফলে ভুয়া কার্ড বানানো প্রায় অসম্ভব হবে। তাই যাদের আধার কার্ড ইতিমধ্যে নেই তাদের প্রচুর সমস্যায় পড়তে হবে.

আধার আপডেট করার প্রক্রিয়া

আধার কার্ড খুব সহজেই আপডেট করা যায় এজন্য আপনি নিজেও করতে পারেন অথবা নিকটবর্তী আধার সেন্টারে গিয়েও আপডেট করাতে পারেন। যারা পুরোনো আধার আপডেট করতে চান, তাদের জন্য সহজ প্রক্রিয়া রাখা হয়েছে—

  1. নিকটস্থ আধার কেন্দ্র বা CSC সেন্টারে যেতে হবে।
  2. নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে নথিপত্র জমা দিতে হবে।
  3. ছবি ও বায়োমেট্রিক আবার নেওয়া হবে।
  4. কয়েক দিনের মধ্যে আপডেটেড আধার পাওয়া যাবে।
  5. যদি কারো মোবাইল নাম্বার লিঙ্ক করা থাকে তাহলে সে নিজেও অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে আপডেট করে নিতে পারবেন। এছাড়া UIDAI পোর্টাল বা মোবাইল অ্যাপ দিয়েও কিছু তথ্য অনলাইনে আপডেট করা সম্ভব।

আধার কার্ড আজ প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের একটি বিশেষ পরিচয় পত্র। প্রত্যেকটি ভারতীয় নাগরিকের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে তৈরি হয়েছে আধার কার্ড। কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে ফ্রড বা অপব্যবহার হলে দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা দুই-ই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই সরকার এবার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।

এই নিয়মগুলো সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। তাই এখনই আধার কার্ড চেক করুন, পুরোনো হলে আপডেট করুন। মনে রাখবেন, সামান্য অসতর্কতার কারণে শুধু সরকারি সুবিধাই হারাবেন না, আইনি ঝামেলাতেও জড়াতে পারেন।