ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের শুরু হতে যাচ্ছে নতুন করে ভোটার তালিকা সংশোধন বা SIR। এরই মধ্যে আবার একটি চঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এলো যেখানে ২০২৫ সালের ১২ আগস্ট, ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিল যে আধার কার্ড নাগরিকত্বের চূড়ান্ত প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না, আধার কার্ড থাকলেই যে সে ভারতীয় নাগরিক এমনটা নয়। সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে আরো জানানো হয়েছে আধার কার্ড শুধুমাত্র পরিচয় পত্র তবে ভারতের এটি ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। আধার কার্ড শুধুমাত্র ব্যক্তির বায়োমেট্রিক ও ডেমোগ্রাফিক তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত হয়। নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য এই আধার কার্ড যথেষ্ট নয়। তাহলে এখন প্রশ্ন হল আপনি কিভাবে প্রমাণ করবেন যে আপনি ভারতীয় নাগরিক এবং এর জন্য আপনার কি কি ডকুমেন্টস থাকতে হবে? আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই নিচের দেওয়া ডকুমেন্টগুলো থাকলে আপনি ভারতীয় নাগরিক এটা প্রমাণ হয়ে যাবে।

aadhaar not citizenship proof
aadhaar not citizenship proof

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিস্তারিত বিশ্লেষণ

ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘদিন ধরে একটি মামলা চলছিল যেখানে বলা হচ্ছিল আধার কার্ডকে ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ধরা যায় কিনা। তবে বিচারপতি সূর্যকান্তের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার শুনানিতে স্পষ্ট ভাবে বলে দিলেন— এর আগে নির্বাচন কমিশন অবশ্যই ঠিক বলেছে। আধারকে ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে ধরা যায় না। এটি শুধুমাত্র পরিচয় পত্র হিসেবে গণ্য হয় তবে এটি যাচাইয়ের প্রয়োজন পড়ে এবং এটি এমন নথি নয় যা জন্মস্থান বা নাগরিকত্বের আইনি অবস্থান নিশ্চিত করে।

এই মন্তব্যের মাধ্যমে আদালত জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অবস্থানকে সমর্থন করল। এর ফলে সাধারণ মানুষদের মধ্যে আবার দুশ্চিন্তা বেড়ে গেল। অনেকেই মনে করতেন আধার কার্ড থাকলেই সে ভারতের নাগরিক তার আর কোন চিন্তা নেই। তবে বিষয়টা এতটাও সহজ নয়। নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে গেলে আপনাকে আগে জন্মসূত্রে ভারতীয় এটা প্রমাণ করতে হবে অথবা আপনি বৈধভাবে অন্য কোন দেশ থেকে এদেশে এসেছেন এটাও প্রমাণ করতে হবে তাহলেই আপনি হবেন ভারতের নাগরিক।

জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অবস্থান

নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দেয় যে, আধার কার্ড কখনোই ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণ হতে পারে না কারণ- আধার মূলত একটি পরিচয় প্রমাণ (Identity Proof) হিসাবে কাজ করে। আধারের ডাটাবেসে জন্মস্থান বা নাগরিকত্ব সম্পর্কিত তথ্য থাকে না। তাই এই পরিচয়পত্রের সূত্র ধরে নাগরিকত্বের প্রমাণ হয় না।নাগরিকত্ব প্রমাণে জন্মসনদ, পাসপোর্ট, নাগরিকত্ব সনদ ইত্যাদি নথি অধিক গ্রহণযোগ্য।

আধার কার্ড কোথায় কোথায় কাজে লাগবে?

আধার কার্ড মূলত ব্যক্তিগত কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যেমন ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য বা মোবাইলে সিম কার্ড নেওয়ার জন্য এবং সরকারি ভর্তুকি বা কোন স্কিমে টাকা পেতে গেলে আধার কার্ড অবশ্যই পরিচয় পত্র হিসেবে থাকতে হবে।

কোথায় আধার কার্যকর নয়:

নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে আধার কার্ড ব্যবহার করা যাবে না এছাড়াও ভোটার হতে গেলে আর আধার কার্ড গ্রহণযোগ্য হবে না এবং কেউ যদি বিদেশে ভিসা লাগাতে চাই বা পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে চাই তাহলে নাগরিকত্বের প্রমাণ

আইনত প্রেক্ষাপট

২০১৮ সালের সুপ্রিম কোর্টের ৫-সদস্যের বেঞ্চও স্পষ্ট করেছিল যে আধার গোপনীয়তা সংক্রান্ত শর্ত মেনে নির্দিষ্ট সরকারি কাজে ব্যবহার করা যাবে, তবে নাগরিকত্ব বা ভোটাধিকার প্রমাণের জন্য এটি যথেষ্ট নয়। ভোটাধিকার হতে গেলে অবশ্যই ভারতের নাগরিক হতে হবে এবং ভোটার তালিকায় নাম লেখাতে গেলে অবশ্যই আগে নাগরিকত্বের প্রমাণ করতে হবে।

২০১৯ সালে নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা যাচাইয়ের জন্য আধারের সাথে লিঙ্কিং প্রক্রিয়া শুরু করলেও, তা স্বেচ্ছাধীন রাখা হয় অর্থাৎ কেউ যদি ভোটার কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের লিংক না করায় তাহলেও কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। এর কারণ হিসেবে বলা যায় অনেকের ভোটারের তথ্য বা জন্মসূত্রের তথ্যের সঙ্গে আধারের জন্মস্থান বা তথ্যের রেকর্ড অনুপস্থিত ছিল।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিষয়বস্তু

বিষয় বিস্তারিত
রায়ের তারিখ ১২ আগস্ট ২০২৫
আদালতের বেঞ্চ বিচারপতি সূর্যকান্তের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ
মূল বক্তব্য আধার নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়
নির্বাচন কমিশনের যুক্তি আধার কেবল পরিচয়পত্র, জন্মস্থান প্রমাণ নয়
কার্যকর ক্ষেত্র ব্যাংক, মোবাইল, DBT স্কিম
অকার্যকর ক্ষেত্র নাগরিকত্ব যাচাই, ভোটাধিকার প্রমাণ

তবে এখন প্রশ্ন হল নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে গেলে আপনার কি কি ডকুমেন্টস থাকতে হবে বা নির্বাচন কমিশন কি কি ডকুমেন্ট চেয়েছেন। এক্ষেত্রে বলা যায় আপনি যদি ভারতের নাগরিকখন বা নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে চান তাহলে আপনার থাকতে হবে বেশ কয়েকটি ডকুমেন্ট যেগুলি হল-

ভারতে কোনও একটি নথি নাগরিকত্ব প্রমাণ করে না, তবে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কিছু নথি গ্রহণযোগ্য হাই। ভারতীয় পাসপোর্ট নাগরিকত্বের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ। বিশেষ পরিস্থিতিতে জাতীয়তা শংসাপত্র, নাগরিকত্ব/রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বা জন্ম সনদ ব্যবহার করা যায়। তবে আধার কার্ড, ভোটার আইডি বা ড্রাইভিং লাইসেন্স নাগরিকত্ব প্রমাণ করে না—এগুলো শুধু পরিচয় বা কাজে ব্যবহার করা হয়।

আরো ভালোভাবে বলতে গেলে ভারতে নাগরিকত্ব প্রমাণের নিয়ম জন্মতারিখ অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে। যদি কারো জন্ম ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০–১ জুলাই ১৯৮৭-এর মধ্যে জন্ম হলে নিজের জন্মসনদ বা স্কুল সার্টিফিকেট যথেষ্ট, জন্ম প্রমাণপত্র অথবা স্কুল সার্টিফিকেট দেখালে আর কোন ডকুমেন্টস দেখাতে হবে না। তবে সমস্যা হয় এখানে, যাদের জন্ম ১ জুলাই ১৯৮৭–৩ ডিসেম্বর ২০০৪-এ জন্ম হলে নিজের জন্ম সার্টিফিকেট এর সঙ্গে সঙ্গে বাবা বা মায়ের মধ্যে একজনের ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ দরকার। এছাড়াও যদি কেউ ৩ ডিসেম্বর ২০০৪-এর পর জন্মগ্রহণ করে তাহলে বাবা-মা দু’জনেরই নাগরিক প্রমাণ লাগবে।

সুপ্রিম কোর্টের এই রায় স্পষ্ট করেছে যে আধার কেবলমাত্র পরিচয়ের প্রমাণ, নাগরিকত্বের নয়। ভারতের নাগরিক একমাত্র ভারতে ভোটের অধিকার তাই নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও আইনগত কাঠামো আরও মজবুত করতে এবার নতুন করে হবে আবার ভোটার তালিকা সংশোধন বা SIR। নাগরিকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা— পরিচয়পত্র ও নাগরিকত্ব প্রমাণপত্রের মধ্যে পার্থক্য বুঝে প্রয়োজনীয় নথি সংরক্ষণ করা এখন জরুরি।