বর্তমান হচ্ছে ডিজিটাল যুগ এবং বর্তমানে আর ঘরের বাইরে গিয়ে পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করতে হয় না। বর্তমান দিনে ঘরে বসেই প্রচুর উপার্জন করা যায় শুধুমাত্র হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি দিয়েই। বর্তমান সময়ে চাকরির বাজার যতই প্রতিযোগিতামূলক হোক না কেন, মানুষ এখন বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজে নিতে আগ্রহী হচ্ছে। তাই বর্তমান দিনে দেখা যাচ্ছে চাকরির পাশাপাশি মানুষ আরো অর্থ উপার্জনের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম করছেন ঘরে বসেই। আবার অনেকেই বাইরের কোন কাজ না করে শুধুমাত্র ঘরে বসে প্রচুর অর্থ উপার্জন করছেন চাকরি থেকেও বেশি। অনেকে মনে করেন ব্যবসা শুরু করতে গেলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন, বিশেষ করে দোকান ভাড়া নিতে হয়, স্টক রাখতে হয় এবং কর্মচারী নিয়োগ করতে হয়। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে সেই ধারণা অনেকটাই বদলেছে। এখন আর ব্যবসা শুরু করতে আলাদা করে পুঁজি জোগাড় করার প্রয়োজন নেই। শুধু একটি স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই শুরু করা সম্ভব আয়ের দুনিয়ায় এক নতুন অধ্যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শূন্য পুঁজিতেই এমন কিছু ব্যবসা করা সম্ভব, যেখান থেকে নিয়মিত মাসে ₹30,000 কিংবা তারও বেশি আয় করা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং দ্রুত বাড়তে থাকা খাত হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কীভাবে ব্যবসার ধরণ পাল্টে দিচ্ছে
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং আসলে এক ধরনের পার্টনারশিপ ব্যবসা। এক্ষেত্রে আপনাকে ব্যবসা করার জন্য ঘরের বাইরে যেতে হবে না ঘরে বসেই আপনি এই ব্যবসা করতে পারবেন। এখানে আপনাকে নিজের দোকান খুলতে হয় না বা কোনো প্রোডাক্ট মজুত রাখতে হয় না। বরং আপনি অনলাইনে কোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা পরিষেবা প্রচার করেন এবং গ্রাহক সেই পণ্য কিনলে আপনি কমিশন পান। ধরুন, আপনি অ্যামাজন বা ফ্লিপকার্টের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যোগ দিলেন। এরপর আপনার সোশ্যাল মিডিয়া বা ব্লগে একটি প্রোডাক্টের লিঙ্ক শেয়ার করলেন। কেউ যদি আপনার দেওয়া লিঙ্ক ব্যবহার করে সেই পণ্য কিনে, তবে নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন আপনার অ্যাকাউন্টে চলে আসবে। অর্থাৎ আপনি শুধু গ্রাহক এবং কোম্পানির মধ্যে সংযোগ ঘটালেন আর এর মাধ্যমেই আয় হলো। এক্ষেত্রে আপনার লিঙ্ক থেকে যত মানুষ প্রোডাক্ট কিনবে তত আপনার উপার্জন হবে।
এখানে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ঝুঁকি কম। কোনো প্রোডাক্ট বিক্রি না হলে আপনার ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, কারণ আপনাকে বিনিয়োগ করতে হয়নি। ফলে এটি মূলধনহীনদের জন্য এক আদর্শ ব্যবসা মডেল হয়ে উঠেছে।
কীভাবে শুরু করবেন এই ব্যবসা
এই ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমেই আপনাকে একটি প্ল্যাটফর্ম বেছে নিতে হবে। কেউ যদি ভিডিও বানাতে দক্ষ হন তবে ইউটিউব হতে পারে সেরা মাধ্যম। আবার কেউ লেখালিখি করতে ভালোবাসলে ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন। এছাড়াও বর্তমান দিনে বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ করে ফেসবুক পেজ বা ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেও ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
এরপর দরকার সঠিক অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যোগ দেওয়া। বর্তমানে অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট, মীশো, মিন্ত্রা, হোস্টিঙ্গারসহ অনেক সংস্থা বিনামূল্যেই রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দিচ্ছে। একবার রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে আপনি আপনার নিজস্ব লিঙ্ক পাবেন, যেটি শেয়ার করে আয় শুরু করা সম্ভব। তবে শুধু লিঙ্ক শেয়ার করলেই হবে না। গ্রাহককে আকৃষ্ট করতে হলে কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। যেমন ভিডিও রিভিউ, পণ্যের ব্যবহার পদ্ধতি নিয়ে আর্টিকেল, তুলনামূলক বিশ্লেষণ বা টিপসের আকারে তথ্য প্রকাশ করা যায়। এক্ষেত্রে আপনি যে পণ্যটি বিক্রি করবেন সেই ধরনের কোন আর্টিকেল লিখতে হবে বা ইউটিউব এর সেই রিলেটেড কোন ভিডিও বানালেই আপনার লিংক থেকে মানুষ পণ্যটি ক্রয় করবে।
প্রথম দিকে আয় কম হলেও চিন্তার কারণ নেই। সাধারণত শুরুতে মাসে ₹5,000–₹7,000 রোজগার হতে পারে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে কনটেন্ট তৈরি এবং সঠিক প্রচারের মাধ্যমে কয়েক মাসের মধ্যেই মাসে ₹30,000 বা তার বেশি আয় করা সম্ভব।
কেন এটি এত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে
বর্তমান সময়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, এখানে বিনিয়োগের কোনো প্রয়োজন নেই। বিনা পুঁজিতেই আপনি শুরু করতে পারবেন এই ব্যবসা। দ্বিতীয়ত, কাজ করার সময় নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আপনি নিজের সুবিধামতো সময়ে কাজ করতে পারেন। ফলে এটি ছাত্রছাত্রী, চাকরিজীবী কিংবা গৃহিণী—সবাই করতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি অন্য কোন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও এই কাজ করতে পারবেন যেকোনো সময়ে।
আরেকটি বড় কারণ হলো ডিজিটাল যুগের পরিবর্তিত প্রয়োজন। আজকের দিনে মানুষ দোকানে গিয়ে কেনাকাটার থেকে অনলাইনে প্রোডাক্ট অর্ডার করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। বাজারে অসংখ্য ই-কমার্স সাইট রয়েছে এবং প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ এসব সাইট থেকে পণ্য কিনছে। এ কারণে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর সুযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
সম্ভাব্য আয়ের হিসাব
নিচে একটি টেবিলে দেখানো হলো যে কিভাবে ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় আয়ের পরিমাণ বাড়তে পারে—
কাজের অভিজ্ঞতা | মাসিক সম্ভাব্য আয় | প্রধান উৎস |
---|---|---|
প্রথম ৩ মাস | ₹5,000 – ₹7,000 | লিঙ্ক শেয়ার, ছোট ভিডিও |
৬ মাস পরে | ₹15,000 – ₹20,000 | ব্লগ/ইউটিউব থেকে নিয়মিত ট্রাফিক |
১ বছর পরে | ₹30,000+ | ভাইরাল কনটেন্ট, বড় দর্শকগোষ্ঠী |
তবে এই আই কোন নির্দিষ্ট নয়। ইনকাম আরো বাড়তে পারে যদি আপনি বেশি করে প্রচার করতে পারেন।
ডিজিটাল যুগে নতুন প্রজন্মের বড় সুযোগ
বর্তমান ডিজিটাল যুগ আর এই ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং ব্যবসার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী কয়েক বছরে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ভারতের অন্যতম বড় অনলাইন ব্যবসা হয়ে উঠবে। কারণ অনলাইনে কেনাকাটা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গ্রাহকেরা পণ্য কেনার আগে রিভিউ দেখে সিদ্ধান্ত নিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। এর ফলে মানুষ ঘরে বসেই নিজের পছন্দমত যেকোনো পণ্য ক্রয় করতে পারছেন। বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে লিঙ্ক পেলে মানুষ বেশি আগ্রহী হয়। তাই যারা এখনই এই খাতে কাজ শুরু করবেন, ভবিষ্যতে তাদের আয়ের সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়বে।
২০২৫ সালের বাস্তবতা বলছে, ব্যবসা শুরু করার জন্য আর বড় অঙ্কের পুঁজির প্রয়োজন নেই। বর্তমান শুধুমাত্র মোবাইল ফোন থাকলেই আপনার ইনকামের রাস্তা বেরিয়ে যাবে। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট আর একটু পরিশ্রম—এই তিনটি থাকলেই শূন্য পুঁজিতে মাসে ₹30,000 আয় করা সম্ভব। এই ব্যবসার মাধ্যমে বর্তমান দিনে তরুন তরুণীরা প্রচুর উপার্জন করছেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ব্যবসা সফলতা হার অনেক বেড়ে যাবে।
যারা এখনও বাড়তি আয়ের উপায় খুঁজছেন, তাদের জন্য এটি হতে পারে সবচেয়ে সহজ, নিরাপদ এবং সম্ভাবনাময় পথ। তাই দেরি না করে আজ থেকেই শুরু হোক শূন্য পুঁজিতে আয়ের নতুন যাত্রা।

My name is Bongo Sambad, and I have been involved in content writing for the past four years. I provide various types of informative content for users.