দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য সরকারি কর্মীদের মামলা নিয়ে কেস চলছে। এই মুহূর্তে আবারো সুপ্রিম কোর্টে DA মামলায় বিরাট বড় আপডেট উঠে এলো। সুপ্রিম কোর্ট আজ দীর্ঘদিন ধরে চলা মামলা অর্থাৎ আজ ভেঙে দিলো DA বিতরণে রাজ্যের বেতন কাঠামোর ওপর যে ROPA নীতির অস্বচ্ছতা যেটি পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হয় ? আজ (৫ আগস্ট) সকালে ১১:২০‑এ শুরু হয় আজকের এই মামলাটিতে DA মামলার একটি গুরুত্বপূর্ণ শুনানি যেখানে রাজ্য সরকারের যুক্তি ও আদালতের প্রশ্ন উভয়ই ছিল নির্মম কঠোর পরীক্ষা। বেশ কয়েক বছর ধরে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর আজকের দিনটি DA প্রার্থীদের জন্য নতুন আশার সূচনা হতে পারে।

 রাজ্য সরকারের মূল যুক্তি: ROPA 2009 ও সংবিধানের ৩০৯ ধারা

রাজ্যপাল কর্তৃক ২০০৯ সালে জারি করা ROPA Rules, 2009-এর উপর ভিত্তি করে ডিএ প্রদানের নিয়ম তৈরি করা হয়েছে তবে এই নিয়মে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অস্বচ্ছতা। ROPA-র ধারা-৯ অনুযায়ী রাজ্যপালকে কর্মচারীদের পরিষেবা ও পারিশ্রমিক নির্ধারণে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কিন্তু এই নিয়মের উপর বেশ কিছু অস্বচ্ছতা সামনে এসেছে।

রাজ্য সরকার দাবি করেছে যে, ROPA-তে “existing emoluments” বলতে বোঝানো হয়েছে মূল বেতন এবং মহার্ঘ ভাতা, এবং এ ভিত্তিতেই মহার্ঘ ভাতা (DA) দেওয়ার বিধান নির্ধারিত আছে । যদি আর রাজ্য সরকার সেই নিয়ম লঙ্ঘন করেছে এবং বর্ধিত হারে রাজ্য সরকারি কর্মীরা মহার্ঘ ভাতা পাচ্ছে না।

 আদালতের প্রশ্ন: রাজ্যের DA নীতি ও SAT‑HC নির্দেশের মধ্যে কী পার্থক্য?

সুপ্রীম কোর্ট বিশেষভাবে প্রশ্ন তুলেছে:

  • SAT ও কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন AICPI-ভিত্তিতে DA নির্ধারণ করতে, অথচ রাজ্য ROPA-ভিত্তিক ভিন্ন নীতি অবলম্বন করছে এর ফলে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের বেতনের বিস্তার ফারাক দেখা দিয়েছে। এই দুই পদ্ধতির মধ্যে কী প্রকৃত পার্থক্য? রাজ্যের পক্ষ এই পার্থক্য স্পষ্ট করতে ব্যর্থ হয়, ঢালতে পারে না ROPA ও AICPI ভিত্তির তফাৎ। তাই এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় রাজ্য সরকার এই নীতি সঠিকভাবে পালন করছে না। রাজ্য সরকারি কর্মীরা অনেক কম হারে মহার্ঘভাতা পাচ্ছেন।

রাজ্য তাদের DA বিতরণ পদ্ধতির বৈধতা প্রমাণের প্রচেষ্টা করলেও, আদালতের কাছে AICPI ভিত্তিক কেন্দ্রীয় নীতির তুলনায় ROPA নীতির বৈধতা স্পষ্টভাবে দেখাতে ব্যর্থ হয়।

 পূর্ববর্তী নির্দেশনা: ২৫% DA অগ্রিম নিষেধ

কিছুদিন আগে সুপ্রিমকোর্ট রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল ২৫% হারে তাদের বকেয়া সমস্ত দিয়ে মিটিয়ে দিতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার এখনো সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানে নিয়ে এবং বকেয়া মহার্ঘ ভাতা সরকারি কর্মীদের দেয়নি। এর আগে আমরা দেখেছি ২০২৫ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, রাজ্য সরকারকে ২০০৬‑১৫ পর্যন্ত ₹41,770.95 কোটি DA বকেয়ার ২৫% অর্থ 즉 ₹10,442.73 কোটি তিন মাসের মধ্যে জামানত হিসেবে থামিয়ে দিতে হবে । এই জামানত “ফাইনাল শুনানির পূর্বশর্ত” হিসাবে জারি করা হয়।

তারপর জুনে রাজ্য ছয় মাস সময় কাডাপ করেছে, অর্থ জমা দিতে বিলম্ব প্রস্তাব দেয় । রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে টাকা দিতে ব্যর্থ এবং তাদের কাছে টাকা নেই তাই তারা সময় চেয়ে নিয়েছে।

 আজকের শুনানিতে কী ঘটল?

  • সকাল ১১:২০ থেকে শুরু: রাজ্য সরকার নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করে—ROPA ভিত্তিক DA বিতরণ নিয়ন্ত্রিত নীতি। 2019 সালের ROPA পদ্ধতির বৈধতা নিয়ে আজ আলোচনা হয়েছিল।
  • মধ্যাহ্নভোজ বিরতির আগ পর্যন্ত রাজ্য নিজ নীতির স্বার্থে লড়েছে, কিন্তু AICPI ভিত্তিক কেন্দ্রীয় নীতির তুলনায় ROPA পদ্ধতির বৈধতা বিচারপতির কাছে পরিষ্কারভাবে বোঝাতে পারেনি। এর ফলে এই নীতি নিয়ে অস্বচ্ছতার তথ্য উঠে এসেছে এবং সঠিক প্রমাণ দিয়ে এই পদ্ধতি সম্পর্কে বিচারপতিকে স্পষ্ট ভাবে বোঝাতে পারেনি রাজ্যের পক্ষ থেকে।
  • বিচারকরা বারবার প্রশ্ন করেছেন—“রাজ্যের DA নীতির মূল তুলনামূলক সুবিধা কী? কেন AICPI ভিত্তিক কেন্দ্রীয় রেট অনুসরণ করা হবে না?” এর উত্তর এখনো রাজ্যের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।
  • বিরতির পর শুনানি আবার আগামিকাল সন্ধ্যায় পুনরায় শুরু হবে, আরও বিশ্লেষণের প্রত্যাশা করা যাচ্ছে। কিভাবে রাজ্য সরকারের উপর ভিত্তি করে মহার্ঘ ভাতা দিয়ে থাকে এ ব্যাপারে কেন সুপ্রিম কোর্ট কে স্পষ্ট তথ্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে রাজ্য সরকারকে।

 কেন এই মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ?

১. ২৫% অগ্রিম জমার আদেশ:

রাজ্যকর্মীদের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষিত DA বকেয়ার ২৫% হিসেবে আমানত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে—বাকি বিবেচনার জন্য শুনানি চলবে গঠনমূলক আলোচনায়।

 ২. DA বিতরণে স্বচ্ছতা ও নীতির সঙ্গতি:

ROPA ভিত্তিক DA প্রদানের বিষয়ে আদালত চাচ্ছে ফাঁসফুস প্রযুক্তিগত যুক্তিশীলতা না—স্পষ্ট লজিক ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ।

৩. অগাস্ট ২০২৫-এ চূড়ান্ত রায়:

আজকের শুনানি ফাইনাল রায় বের করতে নতুন দিকনির্দেশনাই দিতে পারে। AICPI-এর ভিত্তিতে DA নির্ধারণ হবে কিনা, রাজ্যের নিজস্ব নীতির সঙ্গে আপোস হবে কি না—এসবেই ফোকাস রয়েছে।

 পেছনের ইতিহাস সংক্ষিপ্তভাবে:

  • ২০১৯ সালে SAT নির্দেশ দেয়—রাজ্যের DA কেন্দ্রীয় রেট অনুযায়ী AICPI ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে হবে । এর পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্য সরকারি কর্মীদের ROPA নিয়ম অনুযায়ী বেতন দেওয়া হয়ে থাকে।
  • ২০২২ হাইকোর্ট এ নির্দেশকে বৈধ ঘোষণা করে; রাজ্য সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করে সুপ্রিম কোর্টে। এরপর থেকেই সুপ্রিমকোর্টে শুনানি চলে এবং সুপ্রিম কোর্টের তরফ থেকে ২৫ শতাংশ DA মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয় রাজ্য সরকারকে।

 বিচার ও প্রভাব

পর্ব ভূমিকা / সিদ্ধান্ত
SAT (জুলাই ২০১৯) AICPI ভিত্তিতে DA নির্দেশ
Calcutta HC (মে ২০২২) SAT নির্দেশ বৈধ ঘোষণা
SC (মে ১৬, ২০২৫) ২৫% DA জামানত জামানত বানিয়ে দিতে আদেশ
SC‑পয়েন্ট (আগস্ট ৫, ২০২৫) ROPA vs AICPI নিয়ে রাজ্যের ব্যাখ্যা ও বিচারক প্রশ্ন

সুপ্রিম কোর্ট DA মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করতে পারে আগামিকাল; কারণ—রাজ্যকে তাদের ROPA ভিত্তি ও AICPI-ভিত্তিক কেন্দ্রীয় নির্দেশের মধ্যকার পার্থক্য স্পষ্টভাবে দাঁড় করানোর বিষয়ে এখনও প্রশ্ন থেকে গেছে