আর কোন চিন্তা নেই এবার আর আপনাকে প্রমাণ করতে হবে না আপনি ভারতের নাগরিক কিনা। কেন্দ্র সরকার এবার সকলকেই ভারতের নাগরিকত্ব দেবে। নাগরিকত্ব নিয়ে এতদিন ধরে যে ধোঁয়াশা চলছিল, তার অবসান ঘটাতে বড় পদক্ষেপ নিল কেন্দ্র সরকার। প্রত্যেকটি ভারতীয়কে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য এবার কেন্দ্র সরকার নিয়ে এসেছেন একটি স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড (Smart Citizenship Card)। এই কার্ড থাকলেই নাগরিকত্ব নিয়ে আর কোনও সন্দেহ থাকবে না। এই কার্ড থাকলেই আপনি ভারতীয় এবং এটি সকল ভারতীয় নাগরিকদের দেওয়া হবে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে। তাই আর কোন চিন্তা করতে হবে না এছাড়াও এই কার্ড থাকলে আপনার ভোটার তালিকা সংশোধনের (SIR) ক্ষেত্রেও কোন সমস্যা হবে না।

কেন আসছে এই স্মার্ট কার্ড?
এতদিন ধরে কেন্দ্রে এমন কোন একটি কার্ড ছিল না যেটি দেখানো মানেই আপনি ভারতীয় নাগরিক এবং এই কার্ড সকলের কাছেই থাকতে হবে। এবার কেন্দ্র সরকার সর্বজনীনভাবে এবং প্রত্যেকটি ভারতীয় নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য এনেছেন নাগরিকত্বের কার্ড যার নাম হচ্ছে স্মার্ট সিটিজেনসিভ কার্ড। এতদিন আধার কার্ড ও ভোটার আইডিকে অনেকেই নাগরিকত্ব প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতেন। কিন্তু এগুলো নাগরিকত্ব নয় শুধুমাত্র পরিচয় পত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় সরকার বারবার জানিয়েছে—
- আধার বা ভোটার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়, এগুলো শুধু পরিচয়পত্র। তাই আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড দেখিয়ে কেউ নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারবে না।
- জন্মসনদ বা পাসপোর্ট নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ ভারতীয়র কাছেই এই নথি নেই। আগেকার দিনে মানুষ অতটা সচেতন ছিল না যে সকলেই জন্ম সার্টিফিকেট বানিয়ে রাখবে।।
এই জটিল পরিস্থিতি কাটাতেই এবার একটি একক কার্ড আনা হচ্ছে সর্বজনীনভাবে এবং সকলের জন্য, যা সরাসরি প্রমাণ করবে—“আপনি ভারতের বৈধ নাগরিক।”
স্মার্ট কার্ডে কী কী থাকবে?
নতুন নাগরিকত্ব স্মার্ট কার্ডে যুক্ত করা হবে—
- নাম ও ছবি
- জন্ম তারিখ ও জন্মস্থান
- ইউনিক সিটিজেনশিপ নম্বর
- ডিজিটাল সিগনেচার
- আধুনিক সিকিউরিটি ফিচার
এছাড়াও এই কার্ডে থাকবে QR কোড যেটি স্ক্যান করে সহজেই বোঝা যাবে আপনি ভারতীয় নাগরিক এবং এই কার্ডের মধ্যে আপনার সমস্ত তথ্য নথিভুক্ত করা থাকবে তাই এই কার্ড ব্যবহার করে আপনি যে কোন কাজ করতে পারবেন এমনকি এই কার্ড ব্যবহার করে ভোটার তালিকা সার্ভে (SIR) থেকে শুরু করে সরকারি সমস্ত কাজে নাগরিকত্ব যাচাই সম্ভব হবে।
সরকারের বক্তব্য
সংসদে নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক স্পষ্ট জানিয়েছে—
- সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের অধীনে সরকার প্রত্যেককে নথিভুক্ত করতে বাধ্য। তাই প্রত্যেককে নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য কেন্দ্র সরকার এই কার্ড নিয়ে এসেছেন এবং সকলকে ফ্রিতে বিনামূল্যে এই কার্ডে দেওয়া হবে।
- স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্ব এখন একক নথির আওতায় আসবে। এতদিন পর্যন্ত ভারতে এমন কোন নথি ছিল না যেটি প্রমাণ করে সে একমাত্র ভারতীয় নাগরিক এই কার্ড থাকলেই সে প্রমাণ হয়ে যাবে ভারতীয় নাগরিক এবং প্রত্যেকটি ব্যক্তিকে এবং ভারতের প্রত্যেকটি নাগরিককে এই কার্ড দেওয়া হবে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে।
- এর ফলে ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করা সহজ হবে, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরাও আর ফাঁকফোকর গলিয়ে ঢুকতে পারবে না।
বিরোধীদের মত
বিরোধী শিবিরের দাবি—
“এই কার্ড সাধারণ মানুষকে হয়রানির হাতিয়ার হতে পারে।”
অন্যদিকে সরকারের পাল্টা বক্তব্য—
“এটি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ে তুলবে।”
বর্তমানে নাগরিকত্ব পাওয়ার নিয়ম
বর্তমানে নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে যে নিয়ম রয়েছে সেটি অনেক জটিল এবং কঠিন প্রক্রিয়া। বর্তমানে যে নিয়ম রয়েছে সেটি হল-
- ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ – ১ জুলাই ১৯৮৭ পর্যন্ত ভারতে জন্ম হলে সরাসরি নাগরিকত্ব।
- ১ জুলাই ১৯৮৭ – ৩ ডিসেম্বর ২০০৪ পর্যন্ত জন্ম হলে বাবা বা মায়ের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে।
- ৩ ডিসেম্বর ২০০৪-এর পরে জন্মালে বাবা-মা দুজনের নাগরিক হতে হবে।
তবে এখন থেকে ভোটার কার্ড বা আধার দিয়ে আর নাগরিকত্ব প্রমাণ করা যাবে না। এক্ষেত্রে আপনাকে দেওয়া হবে স্মার্ট কার্ড যেটা আপনার কাছে থাকলেই আপনি ভারতীয় নাগরিক।
কবে আসছে স্মার্ট কার্ড?
- প্রথমে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে কয়েকটি রাজ্যে চালু হবে। সমগ্র রাজ্যের প্রথমে ট্রায়ালভাবে এই কার্ড চালু করা হবে এবং এটা কতটা কার্যকর হয় সেটা দেখা হবে।
- সরকারের লক্ষ্য, ২০২৬ সালের মধ্যেই দেশজুড়ে পুরোপুরি কার্যকর করা। এর ফলে ২০২৬ সাল থেকে এই কার্ড সকলেই হাতে পেয়ে যাবেন।
সাধারণ মানুষের জন্য কী পরিবর্তন আনবে?
এই কাজ থাকলে সাধারণ মানুষকে আর হয়রানি হতে হবে না যে কোন সরকারি কাজের থেকে শুরু করে যে কোন কাজে আপনি শুধুমাত্র এই কার্ড দেখালেই হয়ে যাবে। পড়াশোনার সময় শিক্ষাক্ষেত্র থেকে শুরু করে চাকরির ক্ষেত্রেও এই কার্ড গ্রহণযোগ্য হবে।
- আর জন্মসনদ, পাসপোর্ট, আধার বা ভোটার কার্ড নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না। শুধুমাত্র একটি কার্ড থাকলেই আপনি সমস্ত কাজ করতে পারবেন।
- একটাই স্মার্ট কার্ডে মিলবে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা।
- ভুয়ো ভোটার তালিকা ও অবৈধ নাগরিক চিহ্নিতকরণ সহজ হবে।
- নাগরিক তথ্য সরাসরি ডিজিটাল ডাটাবেসে থাকবে, ফলে তৎক্ষণাৎ যাচাই সম্ভব হবে।
স্মার্ট সিটিজেনশিপ কার্ড চালুর মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ নিয়ে দীর্ঘ বিতর্কের ইতি ঘটতে পারে। এতদিন ধরে কোন সরকারি কাজ করতে হলে বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হতো এবার শুধুমাত্র একটি কার্ড দেখেই আপনি সমস্ত কাজ করতে পারবেন। যদিও বাস্তবে এটি কীভাবে ইস্যু হবে, আবেদন প্রক্রিয়া কতটা সহজ হবে, এবং জনগণকে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে—সেই নিয়ে এখনও বিস্তারিত সরকারি নির্দেশিকা আসেনি।
তবে একবার এই কার্ড হাতে এলে নাগরিকত্ব নিয়ে আর কোনও দুশ্চিন্তা থাকবে না—যে কার্ড আছে, সেই নাগরিক ভারতের প্রকৃত নাগরিক।

My name is Sujit Roy, and I have been involved in content writing for the past four years. I provide various types of informative content for users.