অবশেষে শুরু হলো আবেদন প্রক্রিয়া। আবেদন করলেই রাজ্য সরকার দিচ্ছে ৫০০০ টাকা। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আবারও এক অভিনব পদক্ষেপ নিলো রাজ্যবাসীদের  জন্য। রাজ্য সরকার নতুন করে চালু করেছে “শ্রমশ্রী প্রকল্প ২০২৫”। এই প্রকল্প কেবল একটি আর্থিক সহায়তা স্কিম নয়, বরং এক সম্পূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা উদ্যোগ, যা শ্রমিকদের হাতে অর্থ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের দীর্ঘমেয়াদী কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করবে। অবশেষে শুরু হলো আবেদন প্রক্রিয়া।

দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য সরকার রাজ্যের শ্রমিক শ্রেণীর মানুষদের নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তাদের অনেকেই আর্থিক সংকটে পড়ে পড়াশোনা বন্ধ করেছেন, ঋণে ডুবে গেছেন এবং কাজ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। শ্রমশ্রী প্রকল্প সেই সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে এগিয়ে এসেছে।

আবেদন প্রক্রিয়া

শ্রমিকদের সুবিধার্থে সরকার অনলাইন ও অফলাইন দুইভাবেই আবেদন করার সুযোগ রেখেছে।

অনলাইন আবেদন

অনলাইনে আবেদন করতে হলে শ্রমিকদের সরাসরি অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে নিজেরাই বাড়িতে বসে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।

  1. প্রথমেই শ্রমিকদের যেতে হবে www.karmasathips.wblabour.gov.in ওয়েবসাইটে।
  2. অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ভিজিট করার পরে সেখানে “Shramashree Scheme 2025” অপশন সিলেক্ট করতে হবে।
  3. এরপর আধার, ভোটার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ডিটেলস আপলোড করতে হবে।
  4. এরপর ফাইনাল সাবমিট করতে হবে এবং সাবমিট করলে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবে।

অফলাইন আবেদন

অফলাইনে আবেদন করার বিশেষ সুবিধা রয়েছে।

  • অফলাইন আবেদনের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিশেষ ক্যাম্পের আয়োজন করা হবে।
  • শ্রমিকরা সেখানে সরাসরি গিয়ে ফর্ম জমা দিতে পারবেন। এর জন্য কোনো ঝামেলা নেই।
  • এই আবেদন প্রক্রিয়া জেলা শ্রম দফতরের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।

এইখানে আবেদন করার পরে আপনি উপযুক্ত হলে প্রতি মাসে মাসে আপনার ব্যাংক একাউন্টে ৫০০০ করে টাকা দিকে যাবে। সরকার বিশ্বাস করে যে, এই প্রকল্প শ্রমিক সমাজের জন্য এক “নতুন ভরসার দিশা” হয়ে উঠবে।

কারা পাবেন এই সুবিধা?

এই প্রকল্পে অংশ নিতে হলে কিছু যোগ্যতা অবশ্যই পূরণ করতে হবে— আবেদনকারীকে “West Bengal Migrant Workers Welfare Scheme 2023”-এ নথিভুক্ত থাকতে হবে। আবেদনকারীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গে থাকতে হবে। আবেদনকারী পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে বা তার বাবা-মায়ের ভোটার কার্ড / আধার কার্ড পশ্চিমবঙ্গের হতে হবে। আবেদনকারীর বয়সসীমা ১৮ বছর থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত হতে হবে।

কী কী সুবিধা মিলবে?

শ্রমশ্রী প্রকল্পের আওতায় শ্রমিকরা একাধিক সুবিধা পাবেন— প্রত্যেক শ্রমিককে ৫,০০০ টাকা করে দেওয়া হবে যাতায়াত খরচ হিসেবে। প্রতি মাসে মাসে টাকা দেওয়া হবে। বছরে ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। এছাড়াও এখানে  “উৎকর্ষ বাংলা” প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ‘উদীয়মান স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্প’-এর মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত সাহায্য ও সরকারি ঋণের সুযোগ পেয়ে যাবেন। এর পাশাপাশি শ্রমিকদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি, বৃত্তি ও বিনামূল্যে পড়াশোনার সুবিধা। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়া হবে।

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

শ্রমিকদের মধ্যে এই প্রকল্প নিয়ে প্রবল উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। সকলের জন্য এটা বড় সুবিধা। অনেকেই জানিয়েছেন, মাসে ৫,০০০ টাকা ভাতা তাদের অন্তত নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে সাহায্য করবে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, প্রশিক্ষণ ও ঋণের সুবিধা থাকায় তারা ছোট ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। সাধারণ মানুষের জন্য এটি সবচেয়ে বড় একটি প্রকল্প।

সব মিলিয়ে বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শ্রমশ্রী প্রকল্প ২০২৫ হলো পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে বাড়িতে বসে টাকা উপার্জনের সুযোগ থাকবে। এই প্রকল্প তাদের তাৎক্ষণিক আর্থিক সাহায্য দেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করবে। শ্রমশ্রী প্রকল্প রাজ্যের শ্রমজীবী সমাজকে আত্মনির্ভর করে তুলতে এক নতুন যুগের সূচনা করবে।