ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের কাছে রেশন কার্ড শুধুমাত্র একটি পরিচয় পত্র নয় এটি সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। দেশের কোটি কোটি স্বল্প আয়ের পরিবারগুলি এখনও সরকারি রেশন ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। স্বল্প আয়ের মানুষদের কাছে এই কার্ড শুধু পরিচয়পত্র নয়, বরং প্রতিমাসে চাল, গম, ডালসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য কম খরচে বা অনেক সময় একেবারেই বিনামূল্যে পাওয়ার মাধ্যম। তাই সাধারণ মানুষসেরা এই রেশন ব্যবস্থার সঙ্গে অঙ্গ ভাবে জড়িত রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার তথা কেন্দ্র সরকার নতুন নিয়ম জারি করেছেন, যে নিয়ম পালন না করলে রাজ্যের প্রায় লক্ষ লক্ষ রেশন কার্ড বাতিল হয়ে যেতে পারে । তাই আপনার কার্ড যদি বাতিল করতে না চান এবং আপনি যদি নিয়মিত রেশন পেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে বেশ কয়েকটি নিয়ম। ফলে কোটি কোটি রেশন কার্ডধারীর জন্য বিষয়টি এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ইতিমধ্যে কেন্দ্র সরকার লক্ষ্য করেছেন রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে রেশন ব্যবস্থায় নানা ধরনের অনিয়ম এবং দুর্নীতি হচ্ছিল। এর ফলে অনেক ভুয়ো রেশন কার্ড দেখিয়ে অবৈধভাবে রেশন তুলে নিচ্ছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে একই ব্যক্তির দু তিনটে রেশন কার্ড রয়েছে আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে মৃত কোন ব্যক্তির নামেও রেশন তোলা হচ্ছে। এর ফলে যারা রেশনের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল তাদের ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অনেক সময় দেখা যাচ্ছে তারা ভালো মানের রেশন পাচ্ছে না। যার দরুন প্রকৃত সুবিধাভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছিলেন। তাই এই অসঙ্গতি দূর করতে আধারভিত্তিক eKYC বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সকলকেই আবার নতুন করে এই কাজটি করতে হবে। এর ফলে যারা জীবিত এবং যারা বৈধ তাদের রেশন কার্ড ঠিক থাকবে এবং যাদের রেশন কার্ড অবৈধ এবং যাদের রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার নাম্বার লিঙ্ক নেই সেই সমস্ত রেশন কার্ড বাতিল হয়ে যাবে।
ইতিমধ্যেই সরকারের তরফ থেকে নির্দিষ্ট সময় সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে এবং এই সময়সীমার মধ্যে যদি কেউ eKYC না করেন তাহলে তাদের কার্ড প্রথমে সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হবে। একবার কার্ড বন্ধ হয়ে গেলে সেই কার্ড দিয়ে আর পরবর্তীকালে রেশন দ্রব্য সংগ্রহ করা যাবে না। আবার পুনরায় যখন এই কার্ড চালু করা হবে তখন রেশন পাওয়া যাবে। তবে একবার বন্ধ হয়ে গেলে আবার পুনরায় চালু করতে প্রচুর ঝামেলা রয়েছে। ফলে যাদের কার্ড বাতিল হবে তারা রেশন দ্রব্য সংগ্রহ করা থেকে বঞ্চিত থাকবেন। তাই আপনি যদি একজন সতর্ক নাগরিক হন এবং নিয়মিত রেশন পেতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই রেশন কার্ড ই কেআইসি করে নিতে হবে।
সরকার দুটি পথ খুলে দিয়েছে—অনলাইন ও অফলাইন। এক্ষেত্রে আপনারা রেশন দোকানে গিয়ে অথবা সরকারের তরফ থেকে রেশন কার্ড ঠিক করা ও রেশন কার্ড ekyc করার জন্য বিভিন্ন অফিসের দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন, তবে এক্ষেত্রে আপনি কোথায় গিয়ে এই কাজটি করবেন সেটি অবশ্যই আপনি আপনার নিকটবর্তী রেশন দোকানে গিয়ে জেনে নিতে পারবেন অথবা যাদের আধার কার্ডে মোবাইল নম্বর লিঙ্ক আছে, তারা ঘরে বসেই অনলাইনে কাজটি করতে পারবেন। যাদের আধার কার্ডের সঙ্গে মোবাইল নাম্বার লিঙ্ক নেই তাদের নিকটবর্তী রেশন ডিলারের কাছে গিয়ে বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে eKYC করতে হবে।
eKYC করার সময় সাধারণত যে নথিগুলো প্রয়োজন তা হলো—প্রতিটি ব্যক্তির অরিজিনাল রেশন কার্ড এবং আধার কার্ড নিয়ে যেতে হবে। এছাড়াও আধার কার্ডের সঙ্গে মোবাইল নাম্বার লিঙ্ক থাকতে হবে এবং মোবাইল নাম্বারের সঙ্গে রেশন কার্ড লিঙ্ক করাতে হবে। এজন্য অবশ্যই প্রত্যেকটি ব্যক্তির আধার কার্ড রেশন কার্ড এবং মোবাইল নাম্বার নিয়ে যেতে হবে। তবে দুর্নীতি রোধ করার জন্য একাংশ মানুষ মনে করছেন এই ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। এর ফলে যারা দরিদ্র এবং যাদের রেশন প্রয়োজন তারা রেশন থেকে বঞ্চিত হবেন না।
ইতিমধ্যে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে এই কাজটি সকলেরই করতে হবে কারণ সরকার যে পরিমাণ অর্থ এই রেশন দেওয়ার জন্য খরচ করেন তা শুধুমাত্র প্রকৃত যারা রেশন প্রাপক তাদের কাছে যেন পৌছে যায়। এই কারণে গ্রাহকদের সাময়িক ভোগান্তি হলেও শেষ পর্যন্ত নিজের জন্য এবং দেশের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
রেশন কার্ড সাধারণ মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারণ ভারতে প্রচুর মানুষ এখনো দরিদ্র এবং সাধারণ পরিবারের। তাই এই রেশন দেওযর ফলে তারা ভীষণভাবে উপকৃত হয়। তাই এ রেশন কার্ড একবার বন্ধ হয়ে গেলে সরকারি খাদ্যদ্রব্য থেকে বঞ্চিত হবেন সঙ্গে সরকারি প্রকল্প থেকেও বঞ্চিত হওয়া। তাই যে যেভাবেই সম্ভব, অনলাইন বা অফলাইনে, দ্রুত রেশন কার্ডের eKYC সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরি।

My name is Sujit Roy, and I have been involved in content writing for the past four years. I provide various types of informative content for users.