ভারতবর্ষের অধিকাংশ মানুষজন বর্তমান ফ্রিতে রেশন পাচ্ছে। এছাড়াও দেখা যাচ্ছে ভারতের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ এখনো প্রতিদিন পর্যাপ্ত খাবার পায় না। তাই রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকার মিলিতভাবে ন্যাশনাল ফুড সিকিউরিটি অ্যাক্ট (NFSA) এর আওতায় পরিচালিত ফ্রিতে রেশন ব্যবস্থা, দরিদ্র পরিবারের জন্য অন্যতম প্রধান ভরসা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ পরিবার প্রতি মাসে খুব কম দামে চাল, গম, আটা, চিনি ইত্যাদি পেয়ে থাকে। পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ স্থানে ফ্রিতেই চাল ও আটা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে সম্প্রতি কেন্দ্র সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। আপনি যদি এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি না করে থাকেন তাহলে আপনার রেশন কার্ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং আপনি আর ভবিষ্যতের রেশন নাও পেতে পারেন। আপনি যদি আপনার রেশন কার্ড চালু রাখতে চান এবং আপনার রেশন কার্ড বন্ধ না করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে করতে হবে বিশেষ এই কাজ। তাহলে কি করতে হবে এবং কিভাবে করতে হবে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

সরকারের বক্তব্য, বর্তমানে অনেক ভুয়া রেশন কার্ড বানিয়ে তার মাধ্যমে রেশন তুলে নিচ্ছে। তাই এই ভুয়ো কার্ড বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে ফলে আপনার রেশন কার্ড যদি অরিজিনাল হয় এবং সরকারের এই নির্দেশনামেন তাহলে আপনার রেশন কার্ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বহু বছর ধরে অভিযোগ উঠছে যে, অনেক ব্যক্তি একাধিক রেশন কার্ড ব্যবহার করছেন বা অন্যের নামে থাকা রেশন কার্ড দিয়ে অনৈতিকভাবে রেশন নিচ্ছেন। এর ফলে রাজ্য এবং কেন্দ্র অর্থনৈতিকভাবে ঘাটতি হচ্ছে এবং এর সুবিধা উপভোগ করছে কিছু অসাধু ব্যক্তি। এর ফলে প্রকৃত দরিদ্ররা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই বায়োমেট্রিক ভিত্তিক আধার ভেরিফিকেশনকে বাধ্যতামূলক করে সরকার চাইছে রেশন বিতরণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যারা ই-কেওয়াইসি করবেন না, তাদের রেশন কার্ড অটোমেটিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। তাই আপনি যদি এখনো ই-কেওয়াইসি না করে থাকেন তাহলে তাড়াতাড়ি করিয়ে নিন, না হলে আপনার রেশন কার্ড বন্ধ হয়ে যাবে। এর মানে আপনার রেশন কার্ড একবার বন্ধ হয়ে গেলে, আর সরকার-প্রদত্ত সস্তা খাদ্যসামগ্রী পাবেন না। শুধু তাই নয়, একবার নাম বাদ গেলে নতুন করে আবার ভবিষ্যতে জন্য আবেদন করাও কঠিন হয়ে যাবে। সরকার জানিয়েছে, প্রত্যেকটি রাজ্যের জন্য আলাদা আলাদা করে ডেট লাইন ঘোষণা করা হবে এবং কেউ যদি সেই সময়ের মধ্যে এই প্রক্রিয়া না করে থাকে তাহলে তার রেশন কার্ড বাতিল করে দেওয়া হবে।
ভারতে প্রায় ১৩০ কোটির বেশি মানুষ বাস করেন। এর মধ্যে অধিকাংশ মানুষের রয়েছেন দরিদ্র সীমার নিচে। অনেক পরিবার রয়েছেন দিন আনা দিন খাওয়া এবং অনেক পরিবার অনাহারে দিন কাটায়। রেশন কার্ড তাদের জন্য জীবনধারণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সহায়। রেশন থেকে সামগ্রী পেয়ে তারা নিশ্চিন্তায় কিছুদিন জীবন যাপন করতে পারে। কিন্তু ভুয়ো রেশন কার্ড এবং জালিয়াতির কারণে এই প্রকল্পে প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। ই-কেওয়াইসি করলে— সকলের রেশন কার্ড আধার ডাটাবেসে থাকবে এবং ভুয়া নাম বাদ পড়ে যাবে এছাড়াও প্রকৃত দরিদ্ররা এই সুবিধা পেতে পারবে যার ফলে সরকারের খাদ্য শস্য অপচয় হবে না।
ই-কেওয়াইসি করার ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া
অফলাইন পদ্ধতি
যারা ইন্টারনেট বা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারেন না, বাজাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুবিধা নেই তারা নিকটস্থ রেশন ডিলার, কমন সার্ভিস সেন্টার (CSC) বা জনসেবা কেন্দ্রে গিয়ে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন। আপনার রেশন কার্ড এবং মোবাইল নাম্বার ও আধার কার্ড নিয়ে যেতে হবে এরপরেই সেখানে বায়োমেট্রিক স্ক্যান (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) দিয়ে কয়েক মিনিটেই কাজ শেষ হবে। এই কাজটি করলে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারবেন এবং আপনার রেশন কাটার বন্ধ হবে না।
অনলাইন পদ্ধতি
যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন এবং যাদের মোবাইল নাম্বারের সঙ্গে আধার কার্ডের লিংক করা রয়েছে তারা নিজেরাই এই কাজ করতে পারবেন। এই কাজ করতে হলে প্রথমে নিজেদের রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে “e-KYC” বা “Aadhaar Update” অপশনে ক্লিক করবেন। এরপর সেখানে রেশন কার্ড এবং আধার কার্ডের নাম্বার দিয়ে ক্লিক করলে রেজিস্টার মোবাইল নাম্বারে একটি OTP আসবে এবং সেই ওটিপি যাচাই করার মাধ্যমে e-KYC সম্পন্ন হয়ে যাবে।
রাজ্যভিত্তিক ডেডলাইনের সম্ভাবনা
প্রতিটি রাজ্য আলাদা করে শেষ তারিখ নির্ধারণ করছে। আমাদের পশ্চিমবঙ্গেও ডেড লাইন দিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং এর মধ্যে যদি আপনি আপনার রেশন কার্ড ঠিক না করে থাকেন তাহলে আপনার রেশন কার্ড বাতিল হয়ে যাবে। যেমন— পশ্চিমবঙ্গে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ ডেডলাইন দেওয়া হয়েছে এবং এর মধ্যে আপনার রেশন কার্ড ঠিক করে নিতে হবে, উত্তরপ্রদেশে ৩১ আগস্ট ২০২৫, তামিলনাডুতে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, এবং আসামে ২০ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত সময় দেওয়া হতে পারে। কিছু রাজ্যে গ্রামীণ এলাকায় বিশেষ ক্যাম্প বসিয়ে e-KYC করার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, যাতে সাধারণ মানুষের কোন সমস্যা না হয়। তবে আপনি ভারতের একজন সচেতন নাগরিক হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আপনি আপনার রেশন কার্ডে ই কেওয়াইসি করে নিতে পারেন।
এর আগে আমরা দেখতে পেয়েছি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের উপর রেশন কার্ড ধরা পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ব্যক্তি মৃত রয়েছে তাও তার রেশন তোলা হচ্ছে। এর ফলে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকার উভয়েরই প্রচুর পরিমাণে খাদ্য অপচয় হচ্ছে। তাই ই কেওয়াইসি চালু হলে যারা ভুয়া রেশন কার্ড ব্যবহার করছেন তাদের রেশন কার্ড বাতিল হয়ে যাবে এবং রেশন কার্ড জালিয়াতি কমে আসবে।
সরকার যেহেতু বিনামূল্য রেশন পরিষেবা দিচ্ছে তাই যাতে ভুয়ো কোন ব্যক্তির রেশন তুলতে না পারে সেই জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। সরকারের এই নতুন পদক্ষেপ ভুয়ো রেশন কার্ডের সংখ্যা কমবে, এবং প্রকৃত দরিদ্ররা তাদের প্রাপ্য সুবিধা পাবেন। তবে ডেডলাইন মিস করলে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে, তাই প্রতিটি রেশন কার্ডধারীর এখনই এই কাজ সম্পন্ন করা জরুরি। অফলাইন বা অনলাইন— যে কোনো মাধ্যমে e-KYC করা সম্ভব, এবং এটি মাত্র কয়েক মিনিটের প্রক্রিয়া। তাই দেরি না করে নিকটস্থ রেশন অফিস বা CSC-তে গিয়ে অথবা অনলাইনে লগইন করে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি সেরে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

My name is Sujit Roy, and I have been involved in content writing for the past four years. I provide various types of informative content for users.